জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং স্মার্টকার্ড নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্মার্টকার্ড কার্যক্রমই সঠিকভাবে হবে না; কিন্তু এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অস্থায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
চার কোটি অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ডাটাবেজের আওতায় আনতে যাচ্ছে। ওই কাজসহ এনআইডি প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৫ কোটি টাকা। আর প্রকল্পের জন্য ২২ জন পরামর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আউট সোর্সিং জনবলের জন্য ৯.৫৯ কোটি টাকার বিশাল অর্থ ব্যয় করে প্রশিক্ষণ দিতে চাইছে ইসি।
চার কোটিকে অস্থায়ী এনআইডি দেয়াসহ প্রকল্প ব্যয়ের বিভিন্ন অঙ্ক নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বিষয়টি নিয়ে ইসি ও পরিকল্পনা কমিশন বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। কমিশন বিষয়টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মতামতের ওপর ছেড়ে দেয়ার জন্যও সুপারিশ করেছে।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক দুই হাজার ৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছরের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। ওই প্রকল্পের আওতায়ই দেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অস্থায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পরিকল্পনা নিয়েছে।
ইসির এনআইডি বিভাগের যুক্তি হলো, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০ (সংশোধন-২০১৩) অনুযায়ী সব নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের আইন রয়েছে। ভুল সংশোধনসহ গত দুই বছরে ৯৫ লাখ নতুন ভোটার হয়েছে।
অন্য দিকে প্রকল্পের আওতায় ৪০টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের জন্য প্রতি দেশে আড়াই কোটি টাকা হারে এক শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রবাসী ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা এবং অপরাধীদের শনাক্তকরণের জন্যই প্রবাসীদের নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনের তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ২২ জন পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন কোটি ব্লাংক কার্ড ক্রয়, পারসোনালাইজেশন, স্ক্যানিং, প্যাকেজিং ও উপজেলাপর্যায়ে প্রেরণের জন্য ১৬৫ টাকা হিসাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৫ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি স্মার্টকার্ড বিতরণ ও নাগরিকের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহে ব্যয় হবে ১৫ টাকা দরে ৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের মোট ৩২টি যানবাহন আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া নেয়ায় ব্যয় হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ বলছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসি থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হলে দ্বৈততা হবে। এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এছাড়া আইডিইএ প্রকল্পের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড প্রদানের কাজটি বর্তমানে সুষ্ঠুভাবে করা হচ্ছে না। তাই অপ্রাপ্তবয়স্কদের এনআইডি প্রদান কাজ ঠিক হবে না। প্রকল্পের চলমান অংশে যে পরিমাণ পুরনো যানবাহন রয়েছে তা বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় যানবাহন যুক্ত করার জন্য সংগ্রহ প্রস্তাব সংশোধন করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, বিভিন্ন কাজে জরুরি বিধায় প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান প্রকল্পের মূল কাজ হিসেবে বিবেচিত। নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রকল্পের মূল কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে। দেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অস্থায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তাই এটির প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
দেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত জনগোষ্ঠী আগামী ৫ বছর প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হবে, যা মূলত প্রকল্পের টার্গেট গ্রুপে প্রতি বছর ৬০ লাখ হারে পাঁচ বছরে তিন কোটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই এই অবস্থায় দেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের অস্থায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হলে দ্বৈত গণনা হবে। প্রকল্পে ছয়জন পরামর্শককে বাদ দেয়া জন্য কমিশন থেকে বলা হয়েছে।
Leave a Reply