1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

তারেক শামসুর রেহমান
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকদিন থেকেই আলোচনায় আছেন। একের পর এক তিনি সংবাদের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। তার বক্তব্যের জন্য তাকে শুধু বিতর্কিতই করেনি; বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও একটা খারাপ ধারণার জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্পের সময়সীমায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। এখনও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি; অর্থাৎ বড় অর্থনীতি। এ বড় অর্থনীতি হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক। কিন্তু দেখা গেল, চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ যখন এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ল এবং এক সময় খোদ যুক্তরাষ্ট্রে যখন তা আঘাত হানল; তখন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তা যুক্তরাষ্ট্র পালন করতে পারেনি।

 

ট্রাম্প কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বরাবরই ছিলেন উদাসীন। তিনি কখনই এ মহামারীকে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড ছিল না। ডাক্তারদের জন্য ছিল না সুরক্ষা সামগ্রী। এটা যে একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তা ট্রাম্প কখনও স্বীকার করে নেননি। তার অভিযোগ ছিল, এটা উহানের (চীনের) একটি ল্যাব থেকে ‘লিক’ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এর পেছনে কোনো তথ্য-প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি। এটা সত্য, উহানে ‘ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যেখানে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ যখন সুদূর ল্যাটিন আমেরিকাতেও আঘাত হানে, তখন ‘উহান ল্যাব থেকে লিক হওয়ার’ থিওরি ‘সত্য’ বলে ধরে নেয়া যায় না।

তাহলে কোভিড-১৯-এর উৎপত্তি কোথায়? বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা জার্নালে গবেষক গ্লোরিয়া ডিকিই একটি প্রবন্ধ লেখেন গত ৮ জুন। প্রবন্ধের শিরোনাম বলা হচ্ছে, লাখ লাখ বছর ধরে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু মেরু অঞ্চলে বরফচাপা অবস্থায় ছিল। এখন বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় মেরুতে বরফ গলছে। ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো এখন ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাতেই বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চল কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে।

যদিও বিজ্ঞানীরা এ তত্ত্ব এখনও গ্রহণ করে নেননি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এখনও এজন্য চীনকে দায়ী করে চলেছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের স্বার্থ দেখে- এ অভিযোগ তুলে ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯-এর টিকা সরবরাহের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রক্রিয়ায় থাকবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে এটা যুক্তরাষ্ট্রের একটা ব্যর্থতা। ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র আরও যে ক’টি আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে প্যারিস চুক্তি (২০১৫ ও ২০১৬), ট্রাম্প-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি, ইউনেসকো, ইরান পারমাণবিক চুক্তি, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইত্যাদি। এতে করে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার একটি সুযোগ হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সাম্প্রতিককালে একটি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর তা হচ্ছে জাতিগত বিদ্বেষ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’র ধারণা, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদকে উসকে দেয়া, কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার আন্দোলনকে বামপন্থী আন্দোলন হিসেবে তুলনা করা ইত্যাদি নানা কারণে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। গত ২৫ মে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিশ (শ্বেতাঙ্গ) গলা চেপে ধরে হত্যা করে। এরপর আরও বেশ কয়েকটি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে উইসকনসিন রাজ্যের একটি শহর কেনোসাতে। কেনোসাতে পুলিশ কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জ্যাকব ব্লাককে পেছন থেকে গুলি করে আহত করে। ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের পক্ষে কথা বলেন এবং মেয়র ও ওই রাজ্যের গভর্নরের অনুরোধ উপেক্ষা করে কেনোসা সফর করেন, যা জাতিগত দ্বন্দ্ব উসকে দেয়।

ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ মিলিশিয়াদের পক্ষ নেয়ার পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী অবস্থান ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। জনমত জরিপগুলো অন্তত তাই বলছে। এখানে বলাটা প্রাসঙ্গিক হবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয় ইলেকটোরাল ভোটে। এ সংখ্যা ৫৩৮। জিততে হলে পেতে হবে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। ৫০টি স্টেটের মধ্যে কোনো কোনো স্টেটে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা বেশি; কোনোটিতে আবার কম। তবে সব জরিপের ফলাফলই যে শেষ পর্যন্ত ‘সত্য’ হয়, তা বলা যাবে না। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জনমত জরিপ শেষ পর্যন্ত সত্য হয়নি। ওই সময় জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত এর (মোট ৬টি) ভোটেই ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছিলেন।

প্রসঙ্গক্রমে বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাস ২৩১ বছরের; ১৭৮৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত (স্বাধীনতা ঘোষণা ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৮৯-১৭৯৭)। তিনি ছিলেন ফেডারেলিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী। জর্জ এডামসও ছিলেন ফেডারেলিস্ট পার্টির প্রার্থী (১৭৯৭-১৮০১)। কিন্তু তৃতীয় প্রেসিডেন্টের (থমাস জেফারসন, ১৮০১-১৮০৯) শাসনামল থেকে ১৮২৯ সাল পর্যন্ত ডেমোক্রেট রিপাবলিকান পার্টি একসঙ্গে একক প্রার্থী হিসেবে চার টার্ম ক্ষমতায় ছিল। সপ্তম প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) সময় থেকেই ডেমোক্রেট পার্টি আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। রিপাবলিকান পার্টির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন (১৬তম প্রেসিডেন্ট, ১৮৬১-১৮৬৫)। সেই থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দুটি বড় দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান পার্টির মাঝে সীমাবদ্ধ। প্রথমদিকে অবশ্য তৃতীয় একটি পার্টি ‘উইগ পার্টি’র অস্তিত্ব ছিল। উইগ পার্টির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন (৯ম, ১৮৪১)। তবে নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারেননি। ট্রাম্প হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। তিনি রিপাবলিকান দলের সদস্য।

প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই কিছু কিছু ‘ইস্যু’ প্রাধান্য পায়, যা ভোটারদের প্রভাবিত করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভোটাররা ভোট দেন; কিন্তু যিনি বিজয়ী হন, তিনি ওই স্টেটের প্রতিটি ইলেকটরিয়াল কলেজের সব ক’টি ভোট পেয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। এবারও ‘ইস্যু’ আছে। বিশেষ করে বর্ণবাদ, শ্বেতাঙ্গ ‘সুপ্রিমেসি’, ১১.১ ভাগ বেকার সমস্যা, কোভিড-১৯ রোধে ব্যর্থতা, উৎপাদন খাতে ধস ও ব্যাপক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি তথা দক্ষিণ চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ ও স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর সূচনা- সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ভোটাররা তাকে দ্বিতীয় টার্মের জন্য বেছে নেবেন কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন।

তবে অনেক আশঙ্কার কথাও বলছেন কেউ কেউ। এমন অভিমতও দেয়া হয়েছে যে, নির্বাচনে যদি হেরে যান, তাহলে নির্বাচনের ফলাফল তিনি নাও মেনে নিতে পারেন। যদিও এটা করা যায় কিনা কিংবা সংবিধানকে উপেক্ষা করে তিনি এ ধরনের কোনো অসাংবিধানিক কাজ করবেন কিনা, এটা একটা প্রশ্ন। তার রাষ্ট্র পরিচালনার ধরন সম্পর্কে যারা মোটামুটি অবহিত, তারা জানেন- তার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব। রিপাবলিকান পার্টির সম্প্রতি শেষ হওয়া জাতীয় কনভেনশনে (আগস্ট ২৪-২৭, ২০২০) রাশিয়ান হ্যাকাররা সক্রিয় ছিল- এ রকম একটি অভিযোগ তিনি করেছিলেন, যদিও তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। পোস্টাল ব্যালট নিয়েও একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতির ২৩ দশমিক ৬ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রের। অথচ পরিবর্তিত পরিস্থিতি, বিশেষ করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও চীনের সঙ্গে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’-এর কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদা হারিয়ে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে (গ্লোবালিস্ট, ২৫ আগস্ট, ২০২০)।

ট্রাম্প যেভাবে অর্থনীতি ও সমাজনীতি পরিচালনা করছেন, তাতে করে অর্থনীতিতে আরও ধস নামার আশঙ্কা বাড়ছে। আর এটা অব্যাহত থাকলে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যুক্তরাষ্ট্রের আর বেশিদিন লাগবে না। তখন হয়তো বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফকে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে, যা তারা উন্নয়নশীল বিশ্বে করে থাকে। রিচার্ড ফিলিপস তার প্রবন্ধে এভাবেই মন্তব্য করেছেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগত বিদ্বেষ জন্ম দিচ্ছে ‘কৃষ্ণাঙ্গ-দারিদ্র্য’, যা সাধারণত উন্নয়নশীল বিশ্বে দৃশ্যমান। স্বাস্থ্যসেবার করুণ দশা ও সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ব্যর্থতা, অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া, কার্যত একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হওয়া, সর্বোপরি গণতন্ত্রকে ‘হত্যা’ করার চেষ্টা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ট্রাম্পের এসব ভূমিকা সামনে রেখেই যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই একটি প্রশ্ন তাই সর্বমহলে আলোচিত হচ্ছে- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হন, তাহলে তিনি আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যাবেন?

ড. তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com