তার নাম মো. বিল্লাল হোসেন (২৬)। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার গাড়িচালক। একদিন সেই কর্মকর্তাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে রাজধানীর হাতিরঝিলে থামে সে। সেখানে সাহায্য প্রার্থনারত দরিদ্র তিনটি শিশুকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। এর পর ৪ বছর বয়সী মেয়ে ও আড়াই বছর বয়সী ছেলেটির সামনেই ওদের ৯ বছর বয়সী বড় বোনকে একাধিকবার ধর্ষণ করে অসহায় শিশুগুলোকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে। পাশবিক নির্যাতনের শিকার ৯ বছরের শিশুটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। ওর অবস্থা সংকটাপন্ন। অন্যদিকে পুলিশ ধর্ষক বিল্লালকে ঘটনার পর সেদিন রাতেই গ্রেপ্তার করে। পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতে তোলা হয়। সেখানে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে বিল্লালের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে ওই তিন শিশুর মা। মামলাটি তদন্ত করছেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই খাইরুল বাসার। ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় বিল্লালের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে গতকাল শনিবার তিনি আমাদের সময়কে জানান, বিল্লাল হোসেনের বাবার নাম মো. আবদুর রব। গ্রামের বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুর দক্ষিণপাড়ায়। বিল্লাল ৬ মাস আগে বিয়ে করেছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে তার সিলভার রঙের গাড়িটি নিয়ে হাতিরঝিলের রামপুরা সংলগ্ন স্পিডবোট টার্মিনালের কাছে আসে সে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৯ বছরের শিশুটি তার ৪ বছরের বোন ও আড়াই বছরের ভাইকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হাজির হয় ওই টার্মিনালে। সাহায্যের জন্য হাত পেতে দেয় বিল্লালের দিকে। সুযোগ বুঝে বিল্লাল তখন তাদের গাড়িতে ঘোরানোর এবং বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখায়। কিছু না বুঝেই শিশু তিনটি তার গাড়িতে ওঠে। কিছুদুর গিয়ে গাড়িটি থামায় বিল্লাল। চিৎকার করলে শিশু তিনটিকে গলা টিপে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ছোট্ট দুই ভাইবোনের সামনেই তাদের বড় বোনকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তারা কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করলে গাড়ি টান দিয়ে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া নিউ কলোনি এনএইচ বিল্ডিং-৬ (করবী)-এর পেছনে নিয়ে যায় বিল্লাল। সেখানে গাড়িটি থামিয়ে ফের ৯ বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে শিশুরা চিৎকার শুরু করলে অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
এসআই খাইরুল বাসার বলেন, ওই এলাকার স্থানীয়দের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিশুদের মা খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই মোহম্মদপুর থানায় মামলা করেন। তিনি বলেন, এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে জানতে পারি প্রাইভেটকারটি একটি গ্রুপের এক কর্মকর্তার নামে নিবন্ধন করা। আর এর চালক হিসেবে কর্মরত বিল্লাল হোসেন। তথ্য-প্রমাণ নিশ্চিত হয়ে রাতেই বিল্লালকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণকা-ের কথা স্বীকার করেছে।
তিনি জানান, যৌন বিকারগ্রস্ত বিল্লাল এর আগেও এমন কা- ঘটিয়েছে বলে তাদের ধারণা। যদিও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তা সে অস্বীকার করেছে। আদালতের নির্দেশে বিল্লালকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, শিশু তিনটির মা-বাবা কাজের সন্ধানে কয়েক মাস আগে হবিগঞ্জের লাখাই থেকে সপরিবারে ঢাকায় এসেছেন। রামপুরার মেরাদিয়ায় তাদের বসবাস। ওদের মা কাজ না পেয়ে একপর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। হাতিরঝিলে আসা পর্যটকদের দেওয়া সাহায্যে চলে তাদের সংসার।
Leave a Reply