1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

আদালতের সঙ্গেও প্রতারণা শওকতের

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০

‘বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গলীগ’-এর প্রেসিডেন্ট শওকত হাসান মিয়া। সেনাবাহিনীর কোর্ট মার্শালের বিচারে চাকরিচ্যুত সিপাহী অবসরপ্রাপ্ত মেজর সেজে বিছিয়েছিলেন প্রতারণার জাল। এ ভুয়া পরিচয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয় নিয়েও করেছেন সীমাহীন প্রতারণা। নানা কৌশল ও অপকর্মের মাধ্যমে কামিয়েছেন অঢেল সম্পদ। থাকেন আলিশান বহুতল ভবনে, হাঁকিয়ে বেড়ান বিলাসবহুল গাড়ি। থাকেন দেহরক্ষীবেষ্টিত হয়ে। প্রতারণা ছাড়াও কোটি কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাননি আদালতও।

জানা গেছে, রাজধানীর ভাটারায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে গত ২ জানুয়ারি ভাটারা থানায় একটি মামলা হয় (নম্বর-২ (১) ২০।)। মামলাটি করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল।

ইউআইটিএসের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান ভূঁইয়া গতকাল মঙ্গলবার আমাদের সময়কে জানান, ওই মামলায় ৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান শওকত হাসান। আদালত

তাকে ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নি¤œআদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। পাঁচ মাস পর গত ২৭ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালতে শওকত হাসান মিয়া গুরুতর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। অসুস্থতার সমর্থনে কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে না পারায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। অবশেষে গত ১২ আগস্ট শওকতের আইনজীবী মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিম রামপুরার ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটালের প্যাডে দেওয়া এক ‘চিকিৎসা সনদ’ ব্যবহার করে আদালতে জামিন আবেদন করেন।

প্রাপ্তনথি পর্যালোচনা করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শারাফুজ্জামান আনসারীর আদালত সে দিনই তাকে জামিন দেন। কিন্তু যে চিকিৎসা সনদপত্র দেখিয়ে শওকত মিয়া জামিন নিয়েছেন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার পুরোটাই জাল। কোনো অপারেশন করা হয়নি বিবাদীকে। আমাদের সময়ের অনুসন্ধানেও এ আইনজীবীর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

যদিও শওকত হাসান মিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মাসুমুর রহমান মজুমদার গতকাল আমাদের সময়কে জানান, যাবতীয় তথ্য-উপাত্তের আলোকেই আদালতে বিবাদী শওকত হাসান মিয়ার জামিন আবেদন করা হয়। এখানে কোনো জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আদালতে দাখিল করা শওকতের চিকিৎসা সনদের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সনদ আমি আদালতে দাখিল করিনি। তাই এ বিষয়ে আমি অবগত নই।

আমাদের সময়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১২ আগস্ট শওকত হাসান মিয়ার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে দাখিল করা চিকিৎসা সনদকে ভুয়া চ্যালেঞ্জ করে গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের (হাসপাতাল) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন মামলার বাদী ইউআইটিএসের উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল। চিঠিতে পশ্চিম রামপুরার ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটালের প্যাডে রোগী শওকত হাসান মিয়া হাসপাতালে ১ মাস ভর্তি থেকে হাসপাতাল ত্যাগের সময় তার অনুকূলে তারিখবিহীন অসম্পূর্ণ, রোগের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ পথ্যের নাম উল্লেখ করে প্রেসক্রিপশন আকারে চিকিৎসকের ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে ইস্যু করা ব্যতিক্রমধর্মী ও সৃজনকৃত ফেইক অ্যান্ড ফেব্রিকেটেড ছাড়পত্রের বিষয়টি যাচাই করে সঠিক তথ্য সরবরাহের জন্য আবেদন জানান।

অভিযোগে উল্লেখ করেন, শওকত হাসান মিয়া জেলহাজতে থাকা অবস্থায় গত ১২ আগস্ট তার আইনজীবী মো. মাসুমুর রহমান মজুমদারের মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিম রামপুরার ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটালে কর্মরত ডাক্তারের ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে চিকিৎসা সনদ সংযুক্তপূর্বক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শারাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে জামিন আবেদন করেন। এ চিকিৎসা সনদের আলোকে জামিন পান আসামি শওকত হাসান মিয়া। আপাতদৃষ্টিতে সহজেই অনুমেয় চিকিৎসা সনদটি ভুয়া। সর্বোপরি, চিকিৎসা সনদে প্রদত্ত ডাক্তারের বিএমডিসি নম্বর-৮০৮৪৭ ওয়েবসাইটে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সনদে প্রদত্ত ভিন্ন ভিন্ন নাম এবং বিএমডিসি নম্বরে গরমিল রয়েছে। তাই ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার স্বার্থে সত্য উদ্ঘাটন জরুরি। অভিযোগের সততা যাচাইয়ে সোমবারই রামপুরার ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ একটি আভিযানিক টিম।

অভিযোগ তদন্ত করে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা অভিযোগকারী মোস্তফা কামালের বরাবর একটি প্রতিবেদন দেন। সেখানে উল্লেখ করেন ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটালের প্যাডে রোগী শওকত হাসান মিয়া হাসপাতালে ১ মাস ভর্তি থেকে চিকিৎসার পর তার অনুকূলে তারিখবিহীন অসম্পূর্ণ, রোগের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ মেডিসিনের নাম উল্লেখ করে প্রেসক্রিপশন আকারে ডাক্তারের ভিন্ন নাম ব্যবহার করে ইস্যু করা ব্যতিক্রমধর্মী ও সৃজন করা ফেইক অ্যান্ড ফেব্রিকেটেড ছাড়পত্রের বিষয়টি যাচাই করে জানানো যাচ্ছে- রোগী শওকত হাসান মিয়া ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ডেলটা স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি ছিলেন না। ওই হসপিটালের নিয়োগ করা ডাক্তার রিয়েল তারিখবিহীন সনদ নিজ দায়িত্বে দেন। তথ্যটি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানান। একই হাসপাতালের ম্যানেজারের (হাবিবুর রহমান) বক্তব্যও নেওয়া হয়। ম্যানেজার জানান, ওই সময়ে ওই নামে কোনো রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন না।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত চিকিৎসক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত মুচলেকা দেন। মুচলেকায় তিনি উল্লেখ করেনÑ ‘আমি মো. আমির ফয়সাল (রিয়েল), আরএমও ডেলটা হেলথ কেয়ার রামপুরা লিমিটেড। রোগী শওকত হাসান ৫৬ বছর। আমার অধীনে গত ১৭ ফেব্রয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়িতে থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোগী চিকিৎসাধীন সনদ চাওয়ায় আমি ভুলবশত আমার হাসপাতালের সনদ ব্যবহার করি। এটি আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

যদিও গতকাল ডা. রিয়েল সেলফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, শওকত হাসান মিয়া নামে কোনো রোগী আমার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তা মনে করতে পারছি না। অপারেশন করার তো প্রশ্নই উঠে না। তবে শওকতের আইনজীবীকে জাল সনদ সরবরাহের অভিযোগের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন এ চিকিৎসক।

অভিযুক্ত শওকত হাসানের বিষয়ে গত ১২ জুলাই ‘ইউআইটিএসের উপাচার্যের কাছে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি; জামিন নিয়েই লাপাত্তা বঙ্গলীগের প্রেসিডেন্ট শওকত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় ‘আমাদের সময়ে’। শওকত হাসান মিয়া ও তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ইউআইটিএস উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির যে অভিযোগ ওঠে, পুলিশ সে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইউআইটিএসের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, শওকত হাসান মিয়া ইউআইটিএস উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলায় এজাহারনামীয় আসামি। স্থানীয় দুজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে আসামি শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সন্দেহজনক আসামি এসএম মাহমুদ হাসান ৬ মাস জেলহাজতে থাকার পর মহানগর দায়রা জজ কোর্ট হতে জামিন পেলেন। কিন্তু মূল আসামি শওকত হাসান মিয়া হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় ৫ মাস পর হাজির হয়ে মাত্র ১৬ দিন জেলহাজতের পর ভুয়া মেডিক্যাল সনদ দাখিল করে জামিন নিয়ে নিলেন। এ রকম ভুয়া মেডিক্যাল সনদ দাখিল করে আদালত থেকে জামিন নেওয়া আদালতের সঙ্গে প্রতারণার শামিল এবং ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য। এর দায় আসামি এবং আসামিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী এড়াতে পারেন না। কারণ আদালতে এ বিষয়ে মামলার যে কোনো পক্ষ প্রতিকার চাইলে তাকে অবশ্যই ক্লিনহ্যান্ডে আসতে হবে। এটিই আইনের নীতি। বিষয়টি অবশ্যই আদালতের দৃষ্টিগোচর করা হবে বলেও এ আইনজীবী জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বঙ্গলীগের প্রেসিডেন্ট শওকত হাসান মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো সাড়া দেননি তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com