কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা সামাল দিতে কারফিউ জারি করায় গত প্রায় সপ্তাহ ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, দোকানপাট ও উৎপাদন বন্ধ থাকায় অর্থনীতিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আগের ছন্দ ফিরে পেতে বন্দর-শিপিং ডেমারেজ মওকুফ ও কাস্টমসে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিকরা। এসব পদক্ষেপ নেওয়া গেলে অল্প সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আগের অবস্থানে পৌঁছবে বলে মনে করছেন তারা। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, গত সপ্তাহে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকায় আপাতত বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ চার্জ মওকুফ চেয়েছি আমরা। বস্তুত গত কয়েক বছর ধরেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন অর্থবছরেও দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিয়োগ ও রাজস্ব আয়-এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হচ্ছে। সদ্য বিদায়ি অর্থবছরেও এসব খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ সবের পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধ এবং হুন্ডির মতো আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা জানতে গতকাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা দাবি জানান, যেহেতু গত কয়েক দিন শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, তাই ঋণের সুদটা ব্যাংক যাতে পরে নেয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। গ্যাসের সরবরাহ পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করবেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, পণ্য খালাসে কাস্টমসে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব জায়গায় সহযোগিতা করতে হবে। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা আরও বিভিন্ন দাবি জানান। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করা হয়, তাদের দাবি পূরণে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত প্রায় এক সপ্তাহের সহিংসতায় রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। কাজেই এসব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে আশা করা যায়, শিগ্গির ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের সার্বিক কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসবে। বস্তুত গত কয়েক মাস ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, কম রাজস্ব আদায়, ব্যাপক খেলাপি ঋণসহ আর্থিক খাতের বিভিন্ন দুর্বলতা আলোচনায় রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। নতুন বিনিয়োগকারীরাও যাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, সেজন্যও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ে, পড়ছে। কাজেই দেশে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি বৈশ্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েও করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
Leave a Reply