২০২০ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১৩টি ছাত্রহলের ১২টিতে আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিল ছাত্রদল। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ৫ শীর্ষ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ‘সমঝোতা’ না হওয়ায় তখন শুধু সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম হল) কমিটি আটকে যায়। এর প্রায় দুই বছর পর গত বৃহস্পতিবার এসএম হল শাখার কমিটি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম রনি এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারিক। তারা একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কিন্তু নতুন এই কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন হল শাখা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ১৩ নেতা। এ কমিটি গঠনে প্রক্রিয়ায় ‘অনিয়ম ও হুমকির’ অভিযোগ তুলেছেন তারা। সেইসঙ্গে তারা নতুন কমিটির প্রতি ‘অনাস্থা’ জানিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিকার ও ‘অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়’ গঠিত কমিটি স্থগিত চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর চিঠি দিয়েছেন তারা। ছাত্রদল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগের ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতারা কোনো কর্মীর কথা না ভেবে ব্যক্তিস্বার্থ কায়েমের জন্য চরম স্বেচ্ছাচারিতা কায়েম করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অন্তর্ভুক্ত ঐতিহাসিক সুলিমুল্লাহ মুসলিম হল কমিটি গঠনে চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের ১৩টি হলের মধ্যে ১২টি হল কমিটি দুই বছর আগে গঠিত হলেও এতদিন এই একটি হল কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় কর্মীদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে কারও মতামত তোয়াক্কা না করে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা কায়েম করে আসছিল।’
এতে উল্লেখ করা হয়, ‘আগে গঠিত ১২টি হলের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। প্রতিটি হলে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলেও এসএম হলে জোর পূর্বক ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়। এতে হলের নেতাকর্মীদের ভোটার না করে অগণতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রীয় শীর্ষ চার নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিজেদের ভোটার ঘোষণা করে। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী ভোট বর্জন করলেও বাকি পদপ্রত্যাশীদের হুমকি প্রদান করে এই ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।’
কমিটি স্থগিত করার দাবি জানিয়ে এতে বলা হয়, ‘গত ১১ বছরে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আমরা আমাদের জীবনের সব আশা- আকাঙ্ক্ষা প্রাণপাত করে রাজপথে অবস্থান করে আসছি। জেল-জুলুম ও সব নির্যাতন উপেক্ষা আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি। আপনি আমাদের আশা ও ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। আপনার কাছে আকুল আবেদন আমাদের প্রতি এ অন্যায়ের সুষ্ঠু প্রতিকার ও সমাধান চাই এবং অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি স্থগিত করার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান আশা করছি।’
এতে নবগঠিত কমিটির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে স্বাক্ষর করেন ১৩ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রার্থী। তারা হলেন নাহিদুজ্জামান শিপন, নাছির উদ্দিন শাওন, রাজু আহম্মেদ, হাসান আবিদুর রেজা বায়েজিদ, মোহাম্মদ আল আমীন, কাওছার সরকার, সুলতান মো. সালাউদ্দিন সিদ্দিক, জুবায়ের আহমেদ, ইমন হোসেন, রেদোয়ান মাহেদী জয়, সাকিব হোসেন, আফসার তারিক, ইয়াসিন।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চিঠির বিষয়টি তারা জেনেছেন। যেহেতু কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশের উপস্থিতিতে কমিটি গঠিত হয়েছে, তাই এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
Leave a Reply