বর্ণাঢ্য আয়োজন আর উৎসবমুখর পরিবেশে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির ২০ বছরপূর্তি উদযাপন আর নতুন কার্যকরী কমিটি অভিষিক্ত হয়েছে। নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের অন্যতম প্রধান সামাজিক সংগঠন হিসেবে কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখা আর সেবা প্রদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ফ্রেন্ডস সোসাইটিকে কংগ্রেশনাল প্রোক্লেমোশন প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের হাতে প্রোক্লেমোশনটি তুলে দেন। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং তার নিজের এবং অপর দুই কংগ্রেসম্যান গ্রেগরীমিক্স ও টম সোয়াজি এই তিনজন ইউএস কংগ্রেসম্যানের পক্ষ থেকে প্রোক্লেমোশনটি প্রদান করা হয় বলে উল্লেখ করেন। জ্যামাইকার অ্যাবিগেইল অ্যাডামস স্কুল (পিএস-১৩২) মিলনায়তনে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ এবং গেষ্ট অব অনার ছিলেন সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি, সাবেক এমপি এম এম শাহীন, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর, বিশিষ্ট সমাজবেী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রিচার্ড ডনোভার্ন,, কস্টা কনস্টান্টটিডাস ও এলিজাবেথ ক্রাউলী ও সিটি কাউন্সিলম্যার পিটার কু সহ মূলধারার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতৃবৃন্দ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অতিথি ও অভিষিক্ত কর্মকর্তাদের হাতে ফুল এবং বাংলাদেশ ও আমেরিকান পতাকা তুলে দেয়ার পাশাপাশি আকর্ষনীয় উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু’র পক্ষ থেকে রিকগনেশন সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
তিনপর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল কেক কেটে উদ্বোধন, দ্বিতীয় পর্বে নতুন কমিটির অভিষেক ও শুভেচ্ছা বক্তব্য আর তৃতীয় পর্বে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আরো ছিলো বিনা মূল্যে র্যাফল ড্র। র্যাফল ড্র-তে পুরস্কার হিসেবে ল্যাপটপ, ইন্টারনেটের এক বছরের প্যাকেজ বান্ডিল, একটি ৪০ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশনসহ বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী যারা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কেবল তারাই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন। বিপুল প্রবাসী বাংলাদেশী সপরিবারে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ণাঢ্য এ আয়োজন উপভোগ করেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে উৎসবমুখর পরিবেশে কেক কেটে এবং এক গুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর একটু বিরতি দিয়ে মূল মঞ্চে উদ্বোধনী পর্ব। ফ্রেন্ডস সোসাইটির ২০ বছর পূর্তী ও নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব রিজু মোহাম্মদের উপস্থাপনায় এই পর্বের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন মওলানা শহীদুল্লাহ, গীতা থেকে পাঠ করেন সহদেব তালুকদার আর ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায়। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত এবং বিশেষ প্রার্থণা সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রী চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীবৃন্দ। এসময় চিন্ময় সেন্টারের পক্ষ থেকে কমিউনিটিকে সার্ভিস দেয়ার জন্য ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা ও সম্মান জানানো হয়। পরবর্তীতে প্রিয়া ড্যান্স একাডেমীর শিল্পীরা উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় বাংলাদেশীদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, বিগত ২০ বছর ধরে জ্যামাইকায় বাংলাদেশী কমিউনিটি বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করছে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি। সংগঠনটির এই অগ্রণী ভূমিকা ভবিষ্যতে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে মূলধারায় আরো সুদৃঢ় করবে। বক্তারা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইফজাল অহমেদ চৌধুরী। এরপর নব নির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার অতিথি, ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের মঞ্চে আহ্বান করেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গণি নবনির্বাচিত সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারকে শপথ বাক্য পাঠ করান। পরবর্তীতে নবনির্বাচিত সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ২০২০-২০২১ সালের নতুন কর্মকর্তাদের শপথ পাঠ করান। এরপর নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে আমেরিকান পতাকা আর ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের পতাকা নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
এরপর অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ সহ অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি লিডার বেদারুল ইসলাম বাবলা, অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক পিপল এনটেক-এর সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজিব আহমেদ, ফ্রেন্ডস সোসাইটির ২০ বছর পূর্তী ও নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক বিলাল চৌধুরী, নবনির্বাচিত সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, বিদায়ী সভাপতি শেখ হায়দার আলী, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা আল-আমিন রাসেল, প্রধান সমন্বয়কারী এএফএম মিসবাহউজ্জামান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূলধারার রাজনীতিকরা জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটির কর্মকান্ডের প্রশংসা ও সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী দিনে সংগঠনটি যাতে আরো ভালো কর্মকা- করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বক্তারা ২০ বছর আগে যে চেতনা নিয়ে ফ্রেন্ডস সোসাইটি গঠিত হয়েছিল, সেই চেতনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আরও কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন কমিউনিকে ঐক্রবদ্ধ করতে হবে। কোন কোন বক্তা অতি সম্প্রতি ওজন পার্কসহ নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশীরা হামলার শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়। বক্তারা ফ্রেন্ডস সোসাইটির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার তাকে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং ফ্রেন্ডস সোসাইটি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সেবা করতে চাই। আপনারা চাইলে আমি আগামী নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট ২৪ থেকে কাউন্সিলম্যান পদে অংশ নিতে চাই। তিনি ফ্রেন্ডস সোসাইটির বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে আগামী ছয় মাসের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করেন। এসব কর্মকান্ডের মধ্যে থাকবে ২৩ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন অনুষ্ঠান, পাবলিক চার্জবিষয়ক সেমিনার, রক্তদান কর্মসূচি, পবিত্র রমজানে ইফতার মাহফিল (রমজান মাসের তৃতীয় রোববার), বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠান আয়োজন প্রভৃতি। এছাড়া চাকরি-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়সহ বিষয়ভিত্তিক সেমিনারের আয়োজন করা হবে জানিয়ে তিনি সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সৈয়দ মোস্তফা আল-আমিন রাসেল তার বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি সফল করায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং ফ্রেন্ডস সোসাইটির আগামী দিনের অনুষ্ঠানগুলো সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
সেনসাস ব্যুরোর কর্মকর্তা কেভিন সবাইকে চলতি সেনসাসে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সেনসাসে দেওয়া কারো তথ্য সরকারের, সিটিসহ কোনো অথরিটির কাছে এই তথ্য প্রকাশ ও শেয়ার করা না। এতে সবার গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তিনি সবাইকে সেনসাসে অংশ নিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় ও শেষ পর্বে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। টিভি নিউজ প্রেজেন্টার শামসুন নাহার নিম্মির উপস্থাপনায় এ পর্বে নৃত্য পরিবেশ করে প্রিয়া ড্যান্স একাডেমির শিল্পীরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপিপ্রয় শিল্পী শাহ মাহবুব, রোকসানা মির্জা, লিমন চৌধুরী, সোনিয়া সুইটি ও মোস্তফা অনিক রাজ প্রমুখ।
এদিকে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির ২০ বছর পূর্তি ও অভিষেক অ্যাবিগেইল অ্যাডামস স্কুল মিলনায়তন রংবেরং-এর ফেলুন, ফুল আর ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হয়। ফলে সব মিলিয়ে অনুষ্ঠান স্থল উৎসবমুখর হয়ে উঠে। নবীন-প্রবীণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে স্কুল মিলনায়তন একখন্ড বাংলাদেশ-এ পরিণত হয়। মিলন মেলা ঘটে প্রবাসী বাংলাদেশীদের। অনুষ্ঠানটি উপলক্ষ্যে ‘হৃদয়ে বাংলা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানটির সকল আয়োজন দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠনে ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক প্রধান উপদেষ্টা নাসির আলী খান পল এবং উপদেষ্টা যথাক্রমে সালেহ আহমেদ, মোহাম্মদ মনির হোসেন, অধ্যাপিকা হুসনে আরা, মোস্তফা কামাল, প্রফেসর শাহাদৎ হোসেন, এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. আব্দুল লতিফ ও সেলিনা পারভীন, ইউএস সেনসাস ব্যুরোর প্রতিনিধি কেভিন সহ কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে আজিমুর রহমান বুরহান, আব্দুর রহীম হাওলাদার, রুহুল আমিন সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী, মাসুদুল হক সানু, ড. দিলীপ নাথ, আজাদ বাকির, আহসান হাবিব, রোকেয়া আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি আয়োজনে বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন সাইফুল ইসলাম, সৈয়দ আতিকুর রহমান, মো. সেবুল মিয়া, রেজাউল আজাদ ভূইয়া, হুমায়ুন কবীর, শহীতুল ইসলাম, রাব্বি সাঈদ, গোলাম আজম রকি, এস এম সোলায়মান, ইসমাইল হোসেন স্বপন, বাবুল হাওলাদার, মুরাদ খন্দকার, লিটন আহমেদ, তরিকুল ইসলাম তুহিন, হিমু মিয়া, সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন হামিদুর রহমান, মো. কবীর মুন্সি, সমুন খান, আব্দুর লশীদ, সৈয়দ লিটন আলী, তামান্না হাসিনা, সহদেব তালুকদার, রাসেক মালিক, রাশেদ আল হাসান, এমডি বদিউল আলম, মাহিদ আহমদ ও পারভীন গাজী। ছবি: নিহার সিদ্দিকী
Leave a Reply