ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষের পথে। এ মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী মাসের যেকোনো সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে গত কমিটিতে নিষ্ক্রিয় থাকা, দলীয় পদবি ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, থানা- ওয়ার্ড কমিটি গঠনে বাণিজ্যসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে যেসব নেতা জড়িত ছিলেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এবার কোনোভাবেই তাদের ঠাঁই হচ্ছে না। দুই মহানগরে গত কমিটির অন্তত এমন ৫০ জন নেতা বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদ ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য ব্যাপক তোড়জোড় চলছে। জীবন বৃত্তান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই চলছে। গত কমিটিতে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে অর্ধশতাধিক নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা, ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকসহ সকল শ্রেণী পেশার লোকজনকে মূল্যায়ন করার চিন্তাভাবনা করছেন মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ছাড়াও যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ করতে আগ্রহী নন এমন যুবলীগের পাঁচ-ছয়জন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের কয়েকজন সাবেক নেতা মহানগর আওয়ামী লীগে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন এমন জোরালো আলোচনা আছে।
সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে ৯ জন সহসভাপতির মধ্যে দুইজন মারা গেছেন, সহসভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী নতুন কমিটির সভাপতি এবং সহসভাপতি মো: হুমায়ুন কবির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আরেকজন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই পাঁচটি পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনজন যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে দুইজন, তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে একজন, অন্যান্য ২০ জন সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে পাঁচজন বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। গত কমিটিতে ৩৪জন কার্যনির্বাহী সদস্যের মধ্যে দুইটি পদ শূন্য ছিল। ৩২ জন কার্যনির্বাহী সদস্যের মধ্যে ছয়জন বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর আওয়ামী লীগে ৯ জন সহসভাপতির মধ্যে একটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকিদের মধ্যে সহসভাপতি বজলুর রহমান সম্প্রতি নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে এই দুইটি পদ পূরণ করা হবে। তিনটি যুগ্ম সম্পাদক পদের মধ্যে এস এম মান্নান কচি নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আরেকজনের সহসভাপতি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে দুইটি পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্যে যারা বাদ পড়বেন সেখানে নতুন মুখ উঠে আসবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো: বজলুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য জীবন বৃত্তান্ত যাচাই বাছাই চলছে। এ মাসের শেষে দিকে অথবা আগামী মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়ে যাবে-ইনশা আল্লাহ। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কিছু নতুন মুখ আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যাদের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বা যেসব নেতা সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের কমিটিতে না রাখার নির্দেশনা আছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: হুমায়ুন কবির বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কমিটি দেয়ার জন্য। কমিটিতে বিতর্কিতদের কোনোভাবেই ঠাঁই হবে না। ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্রনেতারা কমিটিতে স্থান পাবেন।
জানা গেছে, প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম ঢাকা সিটির আদলে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রাণ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এ কে এম রহমাতুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাদেক খান এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগে সভাপতি ছিলেন হাজী আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাহে আলম মুরাদ। তখন বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কে জড়িয়ে পদ হারান অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। আর সভাপতি এম এ আজিজ মৃত্যুবরণ করায় দক্ষিণে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় আবুল হাসনাতকে। এরপর গত ৩০ নভেম্বর ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নানা বিতর্কে জড়িয়ে দুই মহানগরের চারজনই পদ হারান। ওই চারটি পদেই নতুন মুখ তুলে আনা হয়েছে।
Leave a Reply