বোনকে বাবার বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছিলেন তার ভাই। এ সময় বোনের জামাই বাড়িতে না থাকায় বিকেলে আসতে বলেন বোনের শাশুড়ি। কিন্তু বিকেলে সেখানে পুনরায় গিয়ে বোনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। আজ শনিবার বিকেলে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে তাহের ফকির কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ রেশমা (২০) নামের ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদেন্তর জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রেশমা উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামের দাদন শেখের মেয়ে। তাকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যেতে আজ তার বাড়িতে এসেছিলেন ভাই মুনকির শেখ। তিনি অভিযোগ করেন, তার বোন রেশমাকে হত্যা করে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের তাহের ফকির কান্দি গ্রামের ধলু জমাদ্দারের ছেলে ঠান্ডু জমাদ্দারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রেশমার। বিয়ের পর থেকে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে রেশমার মনমালিন্য চলছিল। প্রায়ই রেশমার সঙ্গে তার স্বামী ঠান্ডুর ঝগড়া হতো। রেশমাকে ঠান্ডু মারধরও করতেন বলে অভিযোগ রেশমার পরিবারের।
শনিবার সকালে রেশমাকে বাবার বাড়ি নিয়ে যেতে তার ভাই মুনকির শেখ ঠান্ডুদের বাড়িতে আসে। বোনকে বাড়ি নিয়ে যাবে বলে রেশমার শাশুড়ির কাছে জানান মুনকির। এ সময় ঠান্ডু বাড়ি নেই জানিয়ে রেশমার শাশুড়ি মুনকিরকে পরে আসতে বলেন। পরে মুনকির একই গ্রামে নানাবাড়িতে চলে আসেন। কথামতো মুনকির বিকেলে পুনরায় বোনের বাড়িতে যান। এ সময় রেশমাকে অনেক ডেকেও ঘরের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে মুনকিরসহ স্থানীয়রা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ঘরের আড়ার সঙ্গে রেশমার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।
এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা কুতুবপুর বাজার থেকে নিহতের স্বামী ঠান্ডুকে আটক করে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজুল হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করেন এবং ঠান্ডুকে আটক করে।
নিহতের ভাই মুনকির শেখ বলেন, ‘সকালে বোনকে নিতে আসলে বোন জামাই ঠান্ডু বাড়ি না থাকার কথা জানিয়ে বোনের শাশুড়ি আমাকে চলে যেতে বলেন। বিকেলে পুনরায় এসে আমার বোনের ঘর বাইরে থেকে আটকানো দেখি। পরে দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় বোনের লাশ দেখতে পাই। আমার বোনকে ওরা মেরে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’
নিহতের বাবা দাদন শেখ বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে তার শাশুড়ি অনেক কষ্ট দিত। এ নিয়ে জামাই ঠান্ডুর সঙ্গে প্রায়ই রেশমার ঝগড়া হতো। কিন্তু এভাবে আমার মেয়েকে ওরা পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলবে এটা ভাবিনি।’
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজুল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা গৃহবধূর স্বামীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠানো হবে। প্রতিবেদন পেলে হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘‘আত্মহত্যা’’ মনে হচ্ছে।’
Leave a Reply