এ বছর ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় ঘাটতি পূরণ করতে ভারত থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করবে বাংলাদেশ। ভারতের সাথে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ টন রফতানির চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মাকেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (ন্যাফেড) বাংলাদেশের কাছে দেড় লাখ টন চাল রফতানি করবে। তবে তাদের সাথে আরো এক লাখ টন চাল রফতানির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ সরকার চাচ্ছে সিংহভাগ চাল সরকারি ন্যাফেডের কাছ থেকে নিতে।
যদিও ভারতের দুটি বেসরকারি রফতানিকারক টেন্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশে চাল রফতানির সুযোগ পেয়েছে।
ভারতের চাল রফতানিকারক সংগঠন অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ভিনোদ কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশে এ বছর বন্যার কারণে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে তারা চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটা মূলত সিদ্ধ চাল। বাংলাদেশ এ বছরও বাসমতি চালে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে অন্য দেশে রফতানি করছে।’
ন্যাফেডের সাথে দেড় লাখ টন চাল রফতানির যে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে, সেই চাল কী দরে দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে তাদের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘দেড় লাখ টন রফতানি চূড়ান্ত হলেও তার দর এখনো ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাইসিং কমিটি সেটা ঠিক করবে। আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যে চুক্তি সই হয়ে যাবে।’
চাল আমদানি করার জন্য বাংলাদেশ সরকার যে গ্লোবাল টেন্ডার আহ্বান করেছিল, তাতে অংশ নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০৫ ডলার প্রতি টন দরে এবং অন্য সংস্থাটি ৪১৬ ডলার প্রতি টন দরে সিদ্ধ চাল রফতানি করবে।
ভিনোদ কুমার বলেছেন, বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ চাল রফতানি করার সুযোগ ভারত পাচ্ছে। কারণ অন্য চাল রফতানিকারক দেশ যেমন থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের থেকেও সস্তায় চাল দিতে পারছি আমরা।
যদিও বাংলাদেশের সাথে চাল রফতানির চুক্তি সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তি। কিন্তু দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলছেন, ‘উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে শান্তি বজায় রাখা বা পূর্ব সীমান্ত নিরাপদ রাখতে নানাভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভারত তাদের সহায়তা দিচ্ছে। যার অন্যতম হলো, প্রায় সমস্ত বাংলাদেশী পণ্যের জন্য ভারতের বাজারকে শুল্কমুক্ত করে দেয়া। বাংলাদেশও ট্র্যানজিট দিয়েছে যার মাধ্যমে উত্তরপূর্বাঞ্চলের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো লাভবান হচ্ছে।’
‘শুধুমাত্র তিস্তার জল না পাওয়া ছাড়া ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশেষ ক্ষোভ থাকার কথা নয়। তবে সম্প্রতি এন আর সি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বাংলাদেশের একটা দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। এখন সেদেশে চালের ঘাটতি পূরণে যদি ভারত এগিয়ে যায়, সেই ক্ষোভ বা দুশ্চিন্তা কিছুটা প্রশমন করতে পারবে বলে ধারণা করছেন অধ্যাপক ভরদ্বাজ।’
ভারতের চাল রফতানিকারকরা বলছে, বাংলাদেশে ভারতের চাল রফতানির ক্ষেত্রে এবার রেকর্ড হতে চলেছে।
Leave a Reply