সাভারের আশুলিয়ার একটি মাদ্রাসায় দুই শিশু শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে হাত-পা বেঁধে নিষ্ঠুর কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ ইব্রাহিম মিয়া ও হাফেজ ওবায়দুল্লাহসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে শ্রীপুরের নতুননগর মদনেরটেক এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই এলাকার জাবালে নূর নামের মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এ সংবাদ প্রচারের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রশাসন নড়েচড়ে বসলে গা ঢাকা দেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
ভিডিওতে দেখা যায়, মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সামনেই শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়া (৩৩) শিক্ষার্থী রাকিব হোসেনকে (৯) হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করছেন। এ সময় পাশেই দেখা যায় হাত-পা বাঁধা আতঙ্কিত মাহফুজুর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থীকে।
নির্যাতনে দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে খবর দেওয়া হয় তাদের পরিবারকে। এদের মধ্যে শিশু রাকিব হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তার পরিবার গ্রামের বাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইলের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্মম শারীরিক নির্যাতনে শিশুটি এখন মানসিকভাবে আতঙ্কিত ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
এদিকে, সোমবার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ক্যামেরায় ধারণ করা ওই দুই শিশু শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচারের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে শিক্ষক হাফেজ ইব্রাহিম মিয়া ও হাফেজ ওবায়দুল্লাহসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়,গত দুই বছর আগে আশুলিয়ার শ্রীপুরের নতুননগর মদনেরটেক এলাকায় জাবালে নুর মাদ্রাসা চালু করেন আব্দুল জব্বার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। ওই মাদ্রাসায় আগে ২’শ শিক্ষার্থী থাকলেও নির্যাতনের কারণে একে একে মাদ্রাসা ছেড়ে যান শিক্ষার্থীরা। মাত্র দুজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে থাকা এখন ১৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে নির্যাতনের শিকার দুই শিশুকেও ওই মাদ্রাসা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন অভিভাবকরা।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মহি উদ্দিন জানান, শিশু শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি জানান, মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন এলাকার জনগণ। রাতেই তারা ওই দুই শিক্ষককে ধরে উত্তমমধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান।
Leave a Reply