বাংলাদেশ প্রথম দফায় ৫১ লাখ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন পাবে। পর্যায়ক্রমে জনসংখ্যার অনুপাতে ৩ কোটি ভ্যাকসিন পাবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর পরিচালক ডা. শামছুল হক এ তথ্য জানান।
শামছুল হক বলেন, সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ১৪১টি ভ্যাকসিন ডেভেলপ করেছে। এর মধ্যে ২৫টি ভ্যাকসিন হিউম্যান ট্রায়ালে আছে। আর থার্ড ফেজ ট্রায়ালে আছে ছয়টি ভ্যাকসিন। এ ছয়টির মধ্যে তিনটি চায়নার, একটি অক্সফোর্ড, একটি মর্ডানার এবং একটি ফাইজারের। থার্ড ফেজের ট্রায়াল শেষ হওয়ার পরই ভ্যাকসিন কী অবস্থায় যাবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে কোনোটি আছে ডাবল ডোজ ভ্যাকসিন আর কোনোটি সিঙ্গেল। ডাবল ডোজের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ দেওয়ার ১৪ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। তবে ভ্যাকসিন কবে আসবে তা এখনো বলা সম্ভব হচ্ছে না। থার্ড ফেজ ট্রায়াল শেষে রেজাল্টের ওপর নির্ভর করবে ভ্যাকসিন কবে আসবে।
ডা. শামছুল হক বলেন, সারাবিশ্ব ভ্যাকসিন নিয়ে একটি প্রস্তুতি নিয়ে আছে। বাংলাদেশও প্রস্ততি নিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির সঙ্গে কাজ করছে। যখনই ভ্যাকসিন আসুক না কেন, সারা পৃথিবীর মানুষ যেন একসঙ্গে তা পায়, সেটি ঠিক করতে বিশ্ব নেতারা গত ৪ জুন ভ্যাকসিন সামিট করেছেন। সামিটের সিদ্ধান্ত মতে একটি কো-ভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি করা হবে, যেন পৃথিবীর সবাই সমহারে ভ্যাকসিন পায়।
তিনি আরও জানান, বিশ্বে ৭০০ মিলিয়ন মানুষের ভ্যাকসিন একসঙ্গে তৈরি করা সম্ভব নয়, এত ভ্যাকসিন তৈরি করার কোনো ইন্ডাস্ট্রিও নেই। তাই বিশ্ব নেতারা কো-ভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি গঠন করেছেন। কো-ভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হবে ফ্রন্টলাইদের (স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী)। সে হিসেবে প্রথমপর্যায়ে সারা পৃথিবীর ৩ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশ ৫১ লাখ ভ্যাকসিন পাবে। এর পর কো-মরবিডিটি মেডিক্যাল ইলনেস (ডায়বেটিস, কিডনি, উচ্চরক্তচাপসহ ক্রনিক ডিজিজ রোগী) আছে এমন ২০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পাবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ভ্যাকসিন পাবে। এই ২০ শতাংশ ভ্যাকসিন যেন ২০২১ সালের মধ্যে আসে, সে হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছে কো-ভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি। এ জন্য ফান্ড তৈরি করে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে কো-ভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি।
ডা. শামছুল হক বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব উন্নত দেশ আছে তারা কিনে নেবে। আর আমাদের মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলো কো-ফাইন্যান্সিং হিসেবে যাবে। পৃথিবীর ৯২টি দেশ কো-ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় আছে। কো-ফাইন্যান্সিংয়ের মডেল কী হবে তা আগামী সেপ্টেম্বরের গ্যাভির বোর্ড মিটিংয়ে নির্ধারণ করা হবে।
ভ্যাকসিন এলে আমরা কী করব তা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তবে ভ্যাকসিন আসার পর কাদের আগে দেব, কীভাবে দেব এবং কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply