1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

জামায়াত ত্যাগে পিছুটান দিতে পারে বিএনপি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০

দীর্ঘদিন নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ফোনালাপের পর নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধীরগতিতে এগোতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণ ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক পর্যালোচনা করবে দলটি।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতির পটভূমি দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। ভারতের সঙ্গে সরকারের কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও কেউ কাউকে ছাড়তে চাচ্ছে না। আবার বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চীন। সরকারের সঙ্গে তাদেরও বেশ সখ্য আছে। চীনের সঙ্গে ভারতের বৈরীভাব কারও অজানা নয়। সে ক্ষেত্রে চীন ও ভারত কেউ-ই চায় না বাংলাদেশের সঙ্গে শত্রুরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক থাকুক। অন্যদিকে ভারত ঠেকাতে পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্ব অনেক পুরনো। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে জামায়াতের সম্পর্ক গভীর, বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক দেশটির সঙ্গে।

এমন প্রেক্ষাপটে হঠাৎ শেখ হাসিনার সঙ্গে ইমরান খানের ফোনালাপ কেন? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপির আন্তর্জাতিক

উইংয়ে। দলের নীতিনির্ধারক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন এমন নেতারা বিষয়টি খুব নাটকীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তাদের অনেকের ভাবনা, চীনের হস্তক্ষেপে হয়তো পাকিস্তান বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছে। এ অঞ্চলের রাজনীতিতে ভারতকে একঘরে রাখা চীনের কোনো কৌশলের অংশ হতে পারে।

বিএনপি নীতিনির্ধারকরা এখন ভাবছেন, জামায়াতের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের যে সম্পর্ক, তাতে এদিকে জামায়াত সব সময় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। পাকিস্তানের আগ্রহে সরকার যদি শত্রু দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে, তা হলে বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়বে কেন? বিএনপি ও জামায়াতÑ দুদল পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। দুদল একজোটে থাকলে ভূ-রাজনীতিতে বরং পরিবর্তন আনতে পারবে সহজে।

সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জামায়াত ছাড়াও বিষয়ে কোনো নেতা মিডিয়ায় কথা বলতে পারবেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা খোলামেলা কথা বলেছেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তাদের মতে, জামায়াতকে ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গভীরভাবে ভাবতে হবে। কারণ এর ফলে প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তনের মনোভাব তৈরি হয়, সে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু একজন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকও। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ অন্তরঙ্গ। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি তার ব্যক্তিগত অভিমত জানান। আউয়াল মিন্টু বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য কোনো কারণে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে দুদলের পথ হবে অভিন্ন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কিন্তু তারা জোটে ছিল না। আওয়ামী লীগ যেদিন হরতাল দিয়েছিল, একই দিন জামায়াতও হরতালের ডাক দিত।

পাকিস্তানের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে তার বিশ্লেষণ, গত কয়েক বছর ধরেই চীনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সম্পর্ক ভালো বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তখন তো পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক খুবই বৈরী ছিল। আবার চীন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। সুতরাং ইমরানের একটি ফোনালাপে সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো হয়ে গেছে, তা বলা যাবে না। এটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের বিষয় আছে। তবে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে ভারতকে কোণঠাসা রাখতে চাইবে চীনÑ এটি সবার জানা। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক হলে তা এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্ক হবে, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন?

সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতা জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। কিন্তু গত ২২ জুলাই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে আলাপের পর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নড়েচড়ে বসেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রকাশ্য অবস্থান এবং বিচারের বিরোধিতা করায় দুই দেশের সম্পর্ক একবারে তলানিতে পৌঁছায়। এ অবস্থায় গত ১৩ বছর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পেছনে ভারতের পুরোপুরি সমর্থন আছে। এরই মধ্যে সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে ইমরান খানের ফোন-বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক চায় পাকিস্তান, চায় নিয়মিত যোগাযোগ শিরোনামে ‘বিবিসি বাংলা’ নিউজ প্রকাশ করে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, যেহেতু জামায়াতের সঙ্গে পাকিস্তানের একটি দীর্ঘদিনের সম্পর্র্ক রয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে আলাপÑ এটির মধ্যে একটি তাৎপর্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জামায়াত অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবে না। আবার বিএনপির সঙ্গেও থাকবে না। তার পর থেকে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্র্কÑ ধরি মাছ না ছুঁই পানি। তারা আদৌ বিএনপির সঙ্গে আছে কিনা, তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে বিএনপি নেতাদের।

বিএনপির আন্তর্জাতিক উইংয়ের এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিএনপি ভারত সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্র্ক গড়তে চাইছে। সে জন্য তারা ভারত বিরোধিতা ছেড়ে বিভিন্ন ফোরামে দেশটির উদ্দেশ্যে নানা সময়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে নানা আশ্বাস দিয়ে আসছে। বিএনপির কূটনীতিক উইংয়ের প্রধান হিসেবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনিও ভারতপন্থি নেতা হিসেবে দলে পরিচিত। বিশেষ করে গত পাঁচ বছর ভারতের দিকেই ঝুঁকে ছিল বিএনপি।

ওই নেতা বলেন, যদিও ভারতের দিক থেকে বারবারই বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আস্থার প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যাপারেও দেশটির আপত্তি আগের মতোই। এ অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে ভারতের আস্থার সম্পর্ক আর গড়ে ওঠেনি। চীনের সঙ্গেও সেই আগের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্র্ক বিএনপির নেই। এক সময় সুসম্পর্র্ক থাকলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকায় পাকিস্তানের সঙ্গে সে সম্পর্কও এখন দৃশ্যমান নেই। ফলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বন্ধু দেশ হারিয়েছে দলটি। জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ার কারণে প্রগতিশীল চিন্তায় বিএনপির গায়ে ইসলামিক তকমা লাগার কারণে পশ্চিমা বিশ্বেও বিএনপি আগের মতো আস্থায় নেই। যুক্তরাষ্ট্র এক সময় পাকিস্তানের বন্ধু থাকলেও এখন প্রভাবশালী এই দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক ভারতের। এ অবস্থায় ভারত যুক্তরাষ্ট্র এক মেরুতে। চীন ও পাকিস্তান অন্য মেরুতে।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোন মেরুর সম্পর্র্ক হবে, ঠিক তার বিপরীত মেরুতে স্বাভাবিক কারণে থাকবে বিএনপি। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না দলের নেতারা।

এরই মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বিএনপি তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের চিন্তার ফসল নিষ্ক্রিয় সার্ককে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিতে চাইছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, সমমর্যাদার ভিত্তিতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্র্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারলে উপমহাদেশে সার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। এ অঞ্চলের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরম হতে পারত বলে মনে করে দলটি। দলটি মনে করে, সার্কভুক্ত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া মর্যাদার ভিত্তিতে হলে উপমহাদেশের চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে বন্ধুপ্রতিম ভারত ও চীনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধাবস্থায় সার্ক গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

দলটি মনে করে, এ অঞ্চলের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এই সার্কই সমাধানের পথ খুঁজে দিতে পারে। এ ছাড়া করোনাপরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিএনপি কোনো পক্ষে না গিয়ে আঞ্চলিক স্বার্থে এ অঞ্চলের শান্তি দেখতে চায়। এ জন্য নিষ্ক্রিয় সার্ককে উজ্জীবিত করা, সার্কের কর্র্মকা- সম্প্রসারিত এবং সার্ককে কার্যকর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ দেখতে চায় বিএনপি।

সম্প্রতি দলটির মহাসচিব মির্র্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যেও তা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, সার্ক এখন কার্যকর নয়, এটিকে কার্যকর করতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সার্ক প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিলÑ এ অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমন। ভারত পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো হবে। এই অঞ্চলে কোনো একক দেশের প্রভাব থাকবে না। চীন ও ভারতের বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট তা হচ্ছে, প্রথমত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে সেটিই আমরা চাই। সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সংযত হয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার পক্ষে।

আঞ্চলিক স্বার্থে সার্ককে কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ সরকার তো ভারতের পরামর্শে সার্ককে কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ভারতও সার্ককে কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় আঞ্চলিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধানে সার্কের মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সার্ককে নেতৃত্বে থাকতে হবে। সার্ককে কার্যকর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

দলটি মনে করে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যে যুদ্ধ অবস্থা তৈরি হয়েছে, সার্ক কার্যকর থাকলে তা দ্রুত সমাধানও হতো। অর্থাৎ এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার এখনো সঠিক একটি প্লাটফরম সার্ক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com