ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা নির্ধারিত। গত প্রায় ২০ বছরে নতুন কোনো অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এতে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির কাছে অটোরিকশার মালিকানা চলে গেছে। আছে চালকদের কাছ থেকে দৈনিক জমার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ। সেই অজুহাতে চালকরা পকেট কাটছেন যাত্রীদের। এবার ঢাকা মহানগরীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি পুনর্বিবেচনা করছে সরকার। নতুন করে আরও ৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতির সুপারিশ করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। চালকরা এসব অটোরিকশার মালিকানা পাবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে একটি অটোরিকশার দাম ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। কিন্তু একটি অটোরিকশার নিবন্ধন নম্বর হাতবদল হচ্ছে ২০ থেকে ২৬ লাখ টাকায়। বর্তমানে অটোরিকশার সরকারনির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে আদায় করা হয় ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার টাকা। দুই শিফটে গাড়ি চালাতে দেওয়া হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এই জমার টাকা দিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের যুক্তি দেখান চালকরা। অবশ্য জমার পরিমাণ না বাড়ালেও মিটারের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে।
ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত সিএনজিচালিত অটোরিকশার সিলিং পুনর্বিবেচনার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে ডিটিসিএ’র। সেখানে ডিটিসিএ, বিআরটিএ, পুলিশ, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ওই বৈঠকে লাইসেন্সধারী চালকদের মধ্যে ৫ হাজার অটোরিকশা বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- ১০ বছরের মধ্যে মালিকানা পরিবর্তন করা যাবে না। ঢাকা মেট্রোরেল ও ঢাকা নগর পরিবহনের ফিডার সার্ভিস হিসেবে ও নির্ধারিত রুটে অটেরিকশার রুট পারমিট দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রো আরটিসি ও বিআরটিএ সিদ্ধান্ত নেবে।
বৈঠকে ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, অনুমোদন পেলে অটোরিকশাগুলো লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি হিসেবে কাজ করতে পারবে। এ ছাড়া ট্যাক্সির বিকল্প হিসেবে ভূমিকা রাখবে। সিএনজিচালিত বৈধ গাড়ি অনুমোদন পেলে অবৈধ বাহন কমানো সম্ভব। এক অটোরিকশার একক মালিকানা এবং অটোরিকশার চালকই মালিক হবেÑ এ রকম নীতি হলে দৈনিক জমা ও বর্ধিত ভাড়াসংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা দূর হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন আমাদের সময়কে বলেন, ২০০২ সালে ৩৭ হাজার বেবি ট্যাক্সি উঠিয়ে ১৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামানো হয়। দীর্ঘদিন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি। অনেক আগেই চালকদের মালিকানায় অটোরিকশা অনুমোদন পাওয়ার কথা। মালিকরা সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দৈনিক জমা নেন। আর রেজিস্ট্রেশনসহ গাড়ির দাম ২৬ লাখ টাকা পড়ে একেকটির। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় এই দশা। অবশ্যই গাড়ির দাম কমাতে হবে।
জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দফায় দফায় আশ্বাস দিয়েছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য ঠেকাতে কঠোর হওয়ার কথা। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা মানা হচ্ছে না। অটোরিকশা রাইড শেয়ারিংয়েও চলছে। তবু অবস্থার উন্নতি নেই।
নব্বইয়ের দশকে মোট ৩৫ হাজার টু স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সি ছিল। সেগুলোর পরিবর্তে ফোর স্ট্রোক ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পরবর্তীকালে মিশুকের পরিবর্তে ২ হাজার ৬৯৬টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সিলিং ধরা হয়। এর বাইরে কিছু অটোরিকশা প্রাইভেট চলার অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করছে। ডিটিসিএ’র হিসাবে ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ২৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে অন্তত ৫ হাজার অটোরিকশা অবৈধ।
Leave a Reply