1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৪ অপরাহ্ন

ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা: বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস।

গতকাল শুক্রবার রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এসময় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি জানান তারা।

এদিন রাত ৯টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

মিছিলটি রায়সাহেব বাজার ও তাঁতিবাজার অতিক্রম করে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যায়। পরে আবার তাঁতিবাজার ও রায়সাহেব বাজার হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা চাঁদার জন্য ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ সারাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি জানান।

অন্যদিকে, রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদল। এসময় তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান।

মিছিলটি টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রোকেয়া হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা এ ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, এটি দেখে আমরা মর্মাহত, লজ্জিত এবং শঙ্কিত। আমরা বার বার বলে এসেছিলাম যে, বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সে যদি দলের হয়, তাহলে সে দলীয় সন্ত্রাসী, সে যদি ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় করে তাহলে ব্যক্তিগত অন্যায়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাত ১১টায় টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।

মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডে সব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে ৫ দফা দাবি জানান।

সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুন নূর তুষার। তিনি বলেন, এক ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে, উলঙ্গ করে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও উদ্বিগ্ন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় একজন মানুষকে এমন পাশবিকভাবে হত্যা করা আমাদের সমাজের চরম মানবিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র।

তিনি আরও বলেন, ঘটনা পরবর্তীতে জানা গেছে, অভিযুক্ত মাহিন যুবদলের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্মী এবং থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- সোহাগ হত্যার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে, অভিযুক্ত মাহিন এবং রবিনসহ সব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষার সংস্কৃতি বন্ধ করা, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা কলেজের হল পাড়া থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি সাইন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাতে বিক্ষোভ করেছেন। এদিন রাত সাড়ে ১২টায় শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এসময় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি জানান তারা।

শিক্ষার্থীরা এসময়- ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়ি দাও ‘, যুবদলের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এসময় তারা ব্যবসায়ীকে হত্যা ও দেশব্যাপী চলমান চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানান।

এর আগে রাত ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, আবাসিক ভবন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে আগারগাঁও মোড় প্রদক্ষিণ শেষে আগারগাঁও-ফার্মগেট রোড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটে এসে শেষ হয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এরপর মিছিলটি সোহরাওয়ার্দী মোড় হয়ে আলাওল এবং এএফ রহমান হলের সামনে দিয়ে আবারো জিরো পয়েন্টে এসে বক্তৃতার মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, মিটফোর্ডে চাঁদার জন্য ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন যুবদল নেতাকর্মীরা। দেশের ছাত্রসমাজ বিএনপি ও তাদর অঙ্গ সংগঠনের অপকর্মকে আর সহ্য করবে না। বাংলাদেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ এই খুনিদের বিচার চায়।

বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, আমরা দেখতে পেরেছি একটা দল গত ১০ মাসে ১০০ খুন করেছে। এমন বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে জুলাইয়ে আন্দোলন করেছি তা বৃথা যেতে দেবো না। নতুন করে শপথ নেওয়ার সময় এসেছে, চাঁদাবাজদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, নতুন বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস এবং খুনিদের ঠিকানা হবে না।

টাঙ্গাইলেও এ হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্নান হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এসময় তারা ‘পাথর মেরে করে খুন, যুবদলের অনেক গুন’, ‘আমার সোনার বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই, চাঁদাবাজের ঠিকানা এই বাংলা হবে না’-এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এসময় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম, তুষার, রিদয়, তামিম, শুভ, সাব্বির প্রমুখ।

এর আগে গত বুধবার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এসময় ভাঙারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে আবারও তাকে পাথর মারা হয়। এভাবেই হত্যা করা হয় সোহাগকে।

নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন চকবাজার থানা যুবদলের সদস্য সচিব পদপ্রার্থী মাহমুদুল হাসান মহিন এবং একই থানার ছাত্রদলের সদস্য সচিব অপু দাস। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com