1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

নির্বাচন সামনে রেখে কঠোর বার্তা তারেক রহমানের

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও মানুষের মন জয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তাই মানুষ পছন্দ করে না এমন কর্মকাণ্ড তথা যে কোনো ধরনের অপকর্ম রোধে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে দলটি। নতুন অবস্থানের আলোকে কমিটি গঠন কিংবা আধিপত্য বিস্তারসহ কোনো ধরনের সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলাই বরদাশত করা হবে না। যত বড় ত্যাগী নেতাই হোক না কেন, যতই মামলা কিংবা জেল-জুলুমের শিকার হোক না কেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে দলীয় এমন কঠোর অবস্থানের কথা জানান তারেক রহমান। কর্মশালা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়মিত টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতা এবং দলপন্থি পেশাজীবী নেতাদের নিয়ে দলের মিডিয়া সেলের আয়োজনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালার আলোচনায় উঠে আসে, আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে দুর্নীতির একটা আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখানে একটা সম্ভাবনার বাংলাদেশ তৈরি করা এবং সেখানে সবাইকে আকৃষ্ট করার জন্য দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থ পাচারকারীদের বিচার হতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বাইরের দুনিয়াকে বোঝাতে হবে যে, বাংলাদেশ দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয় না। এমন আলোচনার প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান জানান, বিএনপি আগামীতে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারসহ তাদের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা পাচার, ভোট ডাকাতি, গুম-খুনের প্রতিটি ঘটনার বিচার হবে।

কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম মহাসচিব ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য রুমিন ফারহানা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, কেন্দ্রীয় নেতা নিলুফার চৌধুরী মনি, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ প্রমুখ।

জানা গেছে, কর্মশালায় লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা, সামনের চ্যালেঞ্জ ও শঙ্কাগুলো কী এবং এখান থেকে উত্তরণের উপায় কী, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির প্রত্যাশা, সামনের নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে তারা সরকার গঠন করবে। তাই একটি দিনও তারা নষ্ট করতে চায় না। সে অনুযায়ী আগামীতে ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮০ দিনের অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কী হবে, এরই মধ্যে তা ঘোষণা করেছে দলটি। দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, মানুষের আস্থা অর্জন এবং ভবিষ্যতের জন্য দৃঢ় ভিত্তি গড়তেই স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও উদ্ভাবনী এই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনার ভেতরে শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থসেবা, নারীর ক্ষমতায়, শহীদদের স্বীকৃতি, কৃষি খাত ও গ্রামীণ উন্নয়ন, শিল্প খাত, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, প্রবাসী কল্যাণ, নগর ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৮ মাসে বিএনপি ১ কোটি কর্মসংস্থান বা চাকরির ব্যবস্থা করবে। ২০৩৪ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ১ ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে বিএনপি। তারেক রহমান এগুলো নিয়ে কাজ করছেন বলে কর্মশালায় জানান।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের অভিমত, বর্তমানে অর্থনীতি হলো দেশের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থনীতির ভান্ডার বলতে গেলে একেবারে শূন্য। সব সূচক নিচের দিকে, দারিদ্র্য বাড়ছে, মানুষের আয় কমে গেছে, বিনিয়োগ নেই, অনেক মিল-কলকারখানা, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে কর্মশালায় বলা হয়, গত এক বছরে এক লাখ পোশাক শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয় কর্মশালায়।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসছে—এই আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন, বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে জনগণের কাছে আপনারা কমিটমেন্ট করছেন, আপনাদেরই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় বের করতে হবে।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা অভিমত ব্যক্ত করেন, লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়ায় দেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে এসেছে। নির্বাচনের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। তবে যারা এটা চায়নি, তাদের থেকে চ্যালেঞ্জ আছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্মশালায় কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কোনো বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা যাবে না, তিনি যত বড় ত্যাগী নেতাই হোন, যত মামলা থাকুক কিংবা যতই জেল-জুলুমের শিকার হোন—অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।

গত রোববার নরসিংদীর পলাশে বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষে এক ছাত্রদলকর্মী গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের ৩ জন আহত হন। একই দিন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কমিটি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। এসব ঘটনা উল্লেখ করে কর্মশালায় তারেক রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনি খুবই দুঃখ পেয়েছেন, ব্যথিত হয়েছেন এবং একই সঙ্গে ক্ষুব্ধও। ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কালিয়াকৈরে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। এমন ঘটনা কোথাও আর বরদাশত করা যাবে না। বিএনপির প্রতি জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশা, সেটা কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না।

তারেক রহমান আরও বলেন, দুই-চারজন অপকর্মকারীর জন্য বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। এর দায়-দায়িত্ব কেন আমরা নেব। আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণের জন্য, আমরা নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিই। আমরা আওয়ামী লীগের মতো মাস্তানি-গুন্ডামি করার শিক্ষা দিই না।

তিনি বলেন, অনেকে মনে করছে, আওয়ামী লীগ তো নেই। সামনে নির্বাচন হলে বিএনপিই তো ক্ষমতায় আসবে। ভোট তো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সে কারণে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। আমি তাদের বলব, ভোটকে ভোট হিসেবেই নিতে হবে। আগামীর নির্বাচন মোটেই সহজ হবে না। মানুষের মন জয় করেই তাদের ভোট নিতে হবে। কীসের কমিটি নিয়ে গন্ডগোল, কীসের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ। বিএনপি আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি করে না। মানুষও এগুলো পছন্দ করে না। আপনারা সব জায়গায় এই বার্তা পৌঁছে দেন, আমার এই কথার প্রতিধ্বনি করেন।

কর্মশালা প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স কালবেলাকে বলেন, একটা কর্মশালা হয়েছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ইভেন্ট ছিল। দেশের বর্তমান-ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয়, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখানে সংযুক্ত ছিলেন, তিনিও বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মাঝেমধ্যে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশকে আমরা কীভাবে গড়তে চাই—এটা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। লিখিতভাবে আমরা আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। তারেক রহমান নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করার জন্য সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য বলেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com