মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক মানুষকে উদ্যোক্তা হতে লোন দেবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা, সবাই উদ্যোক্তা হবে। এতে বেকারত্ব কমবে, কেউ আর চাকরি খুঁজবে না।’
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি ভবন উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট নামে আলাদা ব্যাংক করতে হবে। এজন্য নতুন ব্যাংক আইন তৈরি প্রয়োজন।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংক হবে সামাজিক ব্যবসার ব্যাংক, এটা বাণিজ্যিক ব্যাংক হবে না। মালিক এখান থেকে মুনাফা অর্জন করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা প্রকৃত ব্যাংক বলে দাবি করতো তারা আজকে হাওয়া। তারা কেউ নেই। সব টাকা লোপাট। ব্যাংক শেষ। অন্যদিকে, মাইক্রোক্রেডিটের পয়সা কেউ মারে নাই, কেউ পালিয়ে যায়নি। প্রতিটি পয়সা আছে, তাদের জমা টাকা আছে। তাদের নিজেদের কাজ চলছে। নিজেদের টাকায় নিজেরা চলছে। যেটা প্রকৃত ব্যাংক সেটার দিকে আমরা নজর দেই না। আমরা কোনোরকমে বুঝ দেওয়ার মতো করে যাই। যেটা নকল ব্যাংক সেটা নিয়ে ব্যস্ত। তোলপাড় করে ফেলছে সারা দুনিয়া। এই হলো পরিহাস।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিটের বর্তমান নিয়মে সদস্যদের সঞ্চয় নিতে পারে, কিন্তু কারো ডিপোজিট নিতে পারে না। এটি একটি সীমাবদ্ধতা। যখন এ লাইসেন্স দেওয়া হবে তখন বলে দেওয়া হবে এটি গতানুগতিক ব্যাংকিংয়ের জন্য নয়, এটি মাইক্রোক্রেডিট কার্যক্রমের জন্য দেওয়া হচ্ছে। এটি হবে এমন যে, সামাজিক ব্যবসার জন্য ব্যাংক কারো মুনাফার জন্য নয়। মালিক এ থেকে কোনো মুনাফা নিতে পারবে না।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি পরিচালনায় পৃথিবীতে একটা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি।’
মাইক্রোক্রেডিটের জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের পর প্রত্যেক এনজিও চেষ্টা করলো একইরকম কিছু করতে। ক্রমে ক্রমে প্রসার হতে আরম্ভ করল। নানারকমের নতুন নতুন জিনিস, নানা আইডিয়া নিজেদের সুবিধার জন্য ঢোকাতে আরম্ভ করল। এটা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে মনে করে একটি রেগুলেটরি অথরিটির প্রয়োজন হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, তারা বলল “আমাদের কাজ না”। অর্থ মন্ত্রণালয় শুরুতে গুরত্ব দিল না, পরে বলল “আচ্ছা কী করতে হবে জানাও”। তখন আমরা বললাম, রেগুলেটরি অথরিটি হওয়া দরকার কারণ যে হারে বাড়ছে বড় রকমের সমস্যা হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তৎকালীন গভর্নর ফখরুদ্দীন সাহেব আমাদের সমর্থন করল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে এটা হতে পারবে না। তারা ব্যাখ্যা চাইল। আমি বললাম, এটা বহু দেশে বলেছি, এখনো বলি, গ্রামীণ ব্যাংকও ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংকও ব্যাংক। কিন্তু তফাত অনেক। উদাহরণ দেই, আমেরিকান ফুটবলও ফুটবল। ইউরোপিয়ান ফুটবলও ফুটবল। কিন্তু খেলা ভিন্ন। আপনি যদি ইউরোপিয়ান ফুটবলের রেফারিকে দিয়ে আমেরিকান ফুটবল খেলা চালাতে চান ইট উইল বি অ্য ডিজাস্টার। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রণ করবেন, সে তো ক্ষুদ্র ঋণ জানেই না। সে তো ইউরোপীয় ফুটবলের রেফারি।’
জানা গেছে, এমআরএ ভবনের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল। ভবনটি ১৬ তলা ভিত্তির ওপর নির্মিত একটি বহুতল অফিস ভবন, যার মধ্যে বাউন্ডারি ওয়াল, গেট, গার্ড রুম, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, সেপটিক ট্যাংক, সোক ওয়েল, সাইনেজ, ম্যুরাল এবং ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ অন্তর্ভুক্ত।
Leave a Reply