রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা আয়োজন করেছে তুরস্ক। তবে অনুষ্ঠিতব্য এই শান্তি আলোচনায় পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেউই যোগ দিচ্ছেন না।
বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএনসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন বছরের মধ্যে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে এটিই প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনা হতে যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার রাতে ক্রেমলিন ঘোষণা করেছে, শান্তি আলোচনায় থাকছেন না পুতিন। তবে প্রতিনিধিদলে অভিজ্ঞ টেকনোক্র্যাটদের একটি দল থাকবে, যার মধ্যে রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেডিনস্কি এবং উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন রয়েছেন।
এদিকে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইস্তাম্বুল ভ্রমণের কথা ভাবছিলেন। তবে ক্রেমলিনের ঘোষণার পর হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টও এই আলোচনায় যোগ দেবেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জেলেনস্কি। তিনি জানিয়েছেন, ইস্তাম্বুলে আলোচনায় অংশ নিতে রাজি আছেন। তবে পুতিনকেও তাতে অংশ নিতে হবে। তিনি পুতিনের সঙ্গে সামনাসামনি আলোচনায় বসবেন।
গতকাল বুধবার রাতে এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে কে আসবে তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি এবং তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেব যে, ইউক্রেন কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে তাদের কাছ থেকে যে সংকেত আসছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’
উল্লেখ্য, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে সবশেষ সরাসরি সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। আর ২০২২ সালের মার্চে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর কিছুদিন পর ইস্তানবুলে শেষবার সরাসরি আলোচনায় বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। তখন থেকেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। গত এক বছরে রাশিয়ান বাহিনী ধীরে ধীরে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে, বিশেষ করে দেশটির পূর্বাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই গত রবিবার তুরস্কের বৃহত্তম শহরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানান পুতিন। এরপরই জেলেনস্কি জানান, তিনি নিজে সেখানে যাবেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টেও সেখানে যাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।
তার আগে শনিবার কিয়েভে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকের পর ইউক্রেনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় পশ্চিমা দেশগুলো। তারপরই পুতিন এই প্রস্তাব দেয়।
রবিবার ট্রাম্প ইউক্রেনকে প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানানোর পর জেলেনস্কি নিজে সেখানে যাওয়ার কথা জানান।সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘হত্যা চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই। বৃহস্পতিবার আমি তুরস্কে পুতিনের জন্য অপেক্ষা করব।’
এর আগে বুধবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পুতিন গেলে তিনিও সেখানে যেতে পারেন।বর্তমানে কাতারে অবস্থানরত মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, তিনি না গেলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আসবেন কি না সে বিষয়ে তার সন্দেহ আছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি তিনি (পুতিন) চান আমি সেখানে যাই আর সেটার সম্ভাবনা আছে। আমরা যদি যুদ্ধ বন্ধ করতে পারি, আমি অবশ্যই এ বিষয়ে ভাবব।’
আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিও বুধবার তুরস্কে পৌঁছেছেন, সেখানে বৃহস্পতিবার তিনি ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সেই বৈঠকের আগেই বুধবার সন্ধ্যায় রুবিওর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা। তিনি বলেন, তিনি মার্কিন শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি ইউক্রেনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং রাশিয়াকে ‘ইউক্রেনের গঠনমূলক পদক্ষেপের প্রতিদান দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a Reply