মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে কোটি কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্ত করতে ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে ওই অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বেশি লুটপাট হয়েছে প্রচারণামূলক প্রকল্পে। এমন পাঁচটি প্রকল্প নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
যেখানে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা সরাসরি খরচ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে। সভা-সেমিনার, স্কুল-কলেজ পরিদর্শন, টিভিসি, চলচ্চিত্র নির্মাণ, পত্রিকা-টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয় করা হয়েছে ওই টাকা। নামকাওয়াস্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কৌশল হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) এড়াতে ৫০ কোটি টাকা করে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হতো।
সাধারণত এডিপির আওতায় ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগ প্রকল্প হলে সেই প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভার (একনেক) অনুমোদন নিতে হয় না। কুশীলবরা ওই সুযোগের অপব্যবহার করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত চার বছরে ৫০ কোটি টাকার নিচে এমন পাঁচটি প্রকল্প হাতে নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সব প্রকল্পতেই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে লেখা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন। এসব প্রকল্পের কাজ মন্ত্রী-সচিবের অভিপ্রায় অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হয়।
অন্যদিকে ঘুষের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সনদপ্রতি ৫ লাখ পর্যন্ত নেওয়া হতো। ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সনদ-ভাতা বাতিল করে দেওয়া হতো। শুধু তাই নয়, ঘুষ না দিলে বিশেষ রাজনৈতিক ট্যাগও দেওয়া হতো বিগত ১৫ বছরে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকেই জড়িত ছিলেন। তারা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে (জামুকা) একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার করেছে এতোদিন।
এর আগে গত ৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাসমূহ সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের নথি গায়েব করে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের এনফোর্সমেন্ট অভিযানও পরিচালনা দুদকের পৃথক আরও একটি টিম।
অভিযান পরিচালনাকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক কামিয়াব আফতাহি উন নবীর নেতৃত্বে একটি টিম এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply