1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগ কি নির্বাচন করার যোগ্য দল?

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের দ্বারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এবং দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি নতুন দলের আত্মপ্রকাশকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিও প্রদান করেছে। অতঃপর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি দলের পাশাপাশি এনসিপিও যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হবে, সে বিষয়টি এখন নিশ্চিত। যদিও এনসিপি এখনো নির্বাচন কমিশনের রেজিস্ট্রেশন লাভ করেনি; কিন্তু আবেদন করলে তারা যে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি এ তিনটি দলই মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নির্বাচনি ময়দানে আবির্ভূত হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। যদিও এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্লাস-মাইনাসের একটি সমীকরণ অবশিষ্ট থেকেই যায়। কারণ আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দল। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেস্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করে। কিন্তু ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলটি সঠিকভাবে নির্বাচন না করেই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে। নির্বাচন কমিশনে খয়ের খাঁ বসিয়ে তাদের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রহসন অনুষ্ঠান করিয়ে ভোটাভুটিতে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়াই নিজেরা নিজেদের নির্বাচিত সরকারের তকমা লাগিয়ে নেন! বিশেষ করে ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল যা করেছে, তা অত্যন্ত কলঙ্কজনক। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই লজ্জা এবং কলঙ্কজনক কাজটি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিব, যিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন, তার কন্যা শেখ হাসিনা নিজ হাতে করেছিলেন; কারণ ক্ষমতার লোভে তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। আর এসব কাজে তার দলে অন্য যেসব নেতা ছিলেন, এমপি-মন্ত্রী ছিলেন, তারাও তাকে সমানতালে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছিলেন। এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করার পর, এমনকি ২০২৪-এর ভোটারবিহীন নির্বাচনের পরও কোনো এমপি বা মন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে চোখে আঙুল দিয়ে তার ভুল ধরিয়ে দিতেন, তাহলেও আওয়ামী লীগের আজকের এমন অবস্থা হতো না; সুপ্রাচীন একটি দলের এত বড় ক্ষতি হতো না। কিন্তু কোনো এমপি-মন্ত্রী তো দূরের কথা, শেখ হাসিনার দলের কোনো একজন নেতাও সে কাজটি করে দেখাননি; বরং তারাও সমানতালে বগল বাজিয়ে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঐতিহ্যবাহী দলটি এমন দুরবস্থায় কোনোদিন পড়েনি। আর ফাঁকতালে তার দলের এমপি, মন্ত্রী এবং সরকারি আমলারা যেভাবে দেশের অর্থ লুটপাট করেছেন, সালমান এফ রহমান গং যেভাবে ব্যাংক, শেয়ারবাজার লুটপাট করে সেসব প্রতিষ্ঠান ফোকলা করে দিয়েছেন, তাতে করে দেশের মানুষ তাদের কোনোদিন ক্ষমা করবে বলে মনে হয় না।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগে তো ভালো মানুষও ছিলেন বা আছেন; তাদের কী হবে? তারা কি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ করতে পারবেন, নাকি পারবেন না? এটিও কিন্তু এখন ‘লাখ টাকার প্রশ্ন’। কারণ নবগঠিত এনসিপি দলের ভাব ও ভাষ্য মতে, আওয়ামী লীগকে এ দেশে রাজনীতি করার আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। কেউ কেউ আবার দলটিকে নিষিদ্ধ করার কথাও বলছেন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগে যেসব লোকজন রয়ে গিয়েছেন এবং দীর্ঘকাল ধরে যারা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের কী হবে, সে প্রশ্নটির উত্তরও খুঁজে বের করা জরুরি বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত।

আওয়ামী লীগে যারা সৎ, জনদরদি, ত্যাগী নেতাকর্মী আছেন, ভবিষ্যতে তারা রাজনীতি করতে পারবেন কিনা বা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা। এ বিষয়ে বিএনপির মনোভাবে মোটামুটি আমরা যা জানতে বা বুঝতে পেরেছি তাতে তাদের মধ্যপন্থি বলেই মনে হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগকে তারা নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নয়। কিন্তু জামায়াত ও এনসিপি এক্ষেত্রে চরম পন্থা অবলম্বনের পক্ষপাতী বলেই মনে হচ্ছে। কারণ জামায়াত তাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বলে চলেছে, ‘এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’ জামায়াতের বর্তমান কথাবার্তা, ভাবসাব ইত্যাদি দেখেশুনে ১৯৭২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কথাবার্তা ও ভাবসাবের কথা মনে পড়ে গেল। কারণ দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ মুখে জিকির তুলে রেখেছিল, ‘এ দেশে জামায়াতের কোনো স্থান নেই। তারা পাকিস্তান চলে যাক।’ আর বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ কয়েকটি লেখায় আওয়ামী লীগকে সাবধান করে বলেছিলাম, ‘এ দেশে রাজনীতি করতে হলে জামায়াতকে একোমোডেট করেই তা করতে হবে; কারণ জামায়াতের শিকড় অনেক গভীরে, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক জামায়াতের সমর্থক এবং অনুসারী, সুতরাং কথায় কথায় তাদের রাজাকার বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া বর্তমান প্রজন্মসহ দুই প্রজন্মের জামায়াতিদের কেউই রাজাকার নন বা রাজাকার ছিলেন না। ঠিক একইভাবে জামায়াতিদের উদ্দেশেও বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সবাই কিন্তু খারাপ নয়, তাদের অধিকাংশই কোনো লুটপাট বা খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। যারা অপরাধ করেছে, শুধু তাদেরই অপরাধী হিসাবে গণ্য করা উচিত। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ নেই বা তারা রাজনীতি করতে পারবেন না-এসব বলে নিজেদের আওয়ামী লীগের অতীত কর্মকাণ্ডের সমকক্ষ করে তোলার ঘটনাও বুমেরাং হতে পারে। আর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা অন্য কারও মাথায় থাকলে তাদেরও বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখতে বলব। এক্ষেত্রে নবগঠিত এনসিপি দলের উদ্দেশেও একটি পরামর্শ থাকবে যে, তারাও যেন বিষয়টি ভালোভাবে ভেবে দেখেন, কারণ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ যেমন তাদের পতনের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছিল, তেমনি বর্তমান সরকারও যেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পথে পা না বাড়ায়। কারণ আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল। এখনো তাদের ভোটব্যাংকে ভোট আছে। দেশের মানুষ শেখ হাসিনা এবং তার কুকর্মের যেসব সহযোগীকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছেন বা তারা পালিয়ে গিয়েছেন, সেসব অপরাধীদের, হত্যাকারী-লুটেরাদের বিচার যেমন কাম্য এবং তাদের কেউ যেন ছাড় না পায় বা বিচারের আওতাবহির্ভূত না থাকে, সেদিকে যেমন সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার, ঠিক একইভাবে নিরপরাধ, সৎ, নিঃস্বার্থবান আওয়ামী লীগের অবশিষ্ট নেতাকর্মীদের রাজনীতিতে একোমোডেট করার বিষয়টিও বর্তমান সরকারের ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করি।

 

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com