1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সব মামলা নিরীক্ষার নির্দেশ

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে সব মামলা রুজু হয়েছে, সেগুলোর কতগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক, খতিয়ে দেখতে ৬৪ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। ওই চিঠিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে, ২০০৯ (সংশোধনী ২০১২) ও (সংশোধনী ২০১৩) দায়েরকৃত সব মামলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ৭ হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। প্রত্যাহারকৃত মামলাগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলা নেই। এবার রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলাগুলোও প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত ২৪ মার্চ জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ৬৪ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের আইজিপিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের শাসনামলে দায়েরকৃত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ (সংশোধনী ২০১২) ও (সংশোধনী ২০১৩) এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর বিধান ও ২৯৫-ক ধারার বিধান মোতাবেক মামলাসমূহ বিচারার্থে আমলে গ্রহণের লক্ষ্যে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, ভিন্ন মতাদর্শকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে সন্তুষ্টির নিমিত্তে দায়ের করা হয়েছে কিনাÑ তা যাচাই বা পুনর্তদন্ত করার আবশ্যকতা রয়েছে। পটপরিবর্তনে বর্ণিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে কিনা, কিংবা পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করা হয়েছে কিনা এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে কিনা; তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মামলায় বিবাদীগণ বিগত সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য পদ লাভ, সংহতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করায়

জড়িত, অপহরণ ও প্রতিষ্ঠান বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, এমএফআইয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ, লিফলেট বিতরণ করার বিষয় উল্লেখ করে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ খসড়া চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিদের কে কী কারণে, কীভাবে কোন নির্দিষ্ট অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সম্পৃক্ততার প্রমাণকের বর্ণনা চার্জশিটে উল্লেখ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, বিগত সময়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অসংখ্য মামলা হয়েছে। বিরোধী দল বা মতকে দমন করতে এসব মামলা রুজু করা হয়। গায়েবি মামলা তার বড় উদাহরণ। বিগত সরকারের আমলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে কিনাÑ তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের চিঠি দিয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকা এ সংক্রান্ত কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপারও আছেন। তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারণে হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর দুটি কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। জেলা কমিটির প্রধান প্রত্যেক জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট)। কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপার ও পাবলিক প্রসিকিউটরও আছেন। তারা এখন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিগত সময়ে দায়েরকৃত মামলাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠাবেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২০ মার্চ রাজধানীর বনানী ক্লাব থেকে বিএনপির ৫৫ নেতাকর্মীকে আটকের পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তখন আটক বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, রাজনৈতিভাবে হয়রানি করতেই এই মামলা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ মামলা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা হয়। তখন এই মামলা নিয়ে বড় প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এসব মামলা। সরকার তখন কারও প্রশ্ন বা উদ্বেগ আমলে নেয়নি। এ ধরনের আরও অনেক মামলা দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপির সহআইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবা আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী মত দমন করতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আমরা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৯৬৯টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি। এসব মামলাগুলোয় শুধু মামলা নম্বর আছে, কোনো কোর্ট নম্বর নেই। যে কারণে কোন কোর্টের মামলা, আমরা যাচাই করছি। ইতোমধ্যে প্রায় দেড়শ মামলার কোর্ট খুঁজে বের করা হয়েছে। বাকিগুলোরও খোঁজ চলছে। তিনি জানান, ৯৬৯টি মামলার মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা কোনো মামলা প্রত্যাহারের তালিকায় নেই।

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার কিংবা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কোনো চিঠি পাননি। চিঠি পেলে সে আলোকে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ৭ হাজার ১৮৪টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়ের কমিটি। এই সুপারিশ সংবলিত মন্ত্রণালয়ের আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে সব জেলা ও মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের কাছে। তারা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। ৫০ হাজারেরও বেশি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জমা পড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com