1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২১ অপরাহ্ন

নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবিতে যুগপৎ ধারায় বিএনপি

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার অবস্থান স্পষ্ট না করায় মিত্র রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় ফিরছে ‘অসন্তুষ্ট’ বিএনপি। এজন্য করণীয় ঠিক করতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আজ শনিবার থেকে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করবে দলটি। যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বৈঠক করা হবে।

ধারাবাহিক বৈঠক শেষে মিত্রজোট ও দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে চলতি মাসের শেষে কিংবা আগামী মাসের শুরুতে রাজধানী ঢাকায় বড় পরিসরে একটি সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। দলটি এর মধ্য দিয়ে সরকারকে বার্তা দেবে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এর মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ অব্যাহত রাখতে চাইছে দলটি। গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠকসূত্রে জানা গেছে।

বৈঠকের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, তারা যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি করছেন এবং এটি দেওয়া যে জরুরি, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন বলে তাদের মনে হয়নি। বরং তাদের মনে হচ্ছে, সরকারের ভেতরের কোনো একটি পক্ষ নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। সুতরাং সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত না রাখলে নির্বাচন জুন নয়, আগামী বছরের ডিসেম্বরেও চলে যেতে পারে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী

কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান টুকু বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরকে উপযুক্ত সময় মনে করছি। এই সময়ে আমরা নির্বাচন চাই।

স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শনিবার প্রথম দিন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি ও ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, মিত্রজোট ও দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলা হবে। এ জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনী রোডম্যাপ না দিয়ে সরকারের দিক থেকে বারবার বলা হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার যে সময়ের কথা বলেছে, ওই সময়ে বাংলাদেশের আবহাওয়াসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় ডিসেম্বর মাসই নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করে বিএনপি। নানা যুক্তি তুলে ধরে নেতারা আরও বলেন, জানুয়ারি মাসে দেশের স্কুলগুলোতে বই বিতরণ কার্যক্রম করা হয়। এই সময়ে ভোটগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা বই বিতরণ কার্যক্রমে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের বেশির ভাগ সময় রমজান ও ঈদুল ফিতর। এর পর এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর পরপরই রয়েছে বর্ষাকাল। সব দিক বিবেচনায় ডিসেম্বরই ভোটগ্রহণের জন্য উপযুক্ত সময়।

এ বিষয়গুলো গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব।

এই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন। এতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ও গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক এবং দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার বিষয় একে একে পর্যালোচনা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কী আলাপ-আলোচনা হয়েছে, শুরুতে বিএনপি মহাসচিব নিজেই ব্রিফ করেন। দলের একাধিক নেতা বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘যেহেতু তারা সরকারে আছেন, তাই রাজনৈতিক দলের কথা তাদের শুনতে হয়। তাদের কথাবার্তায় মনে হয়েছে, তারা (সরকার) আমাদেরকে খুব একটা পাত্তা দিয়েছে- এমনটা মনে হয়নি।’

এই অবস্থায় অন্যরা মতামত দেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলে সরকারকে চাপে রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য করণীয় ঠিক করতে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রজোট ও দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়ে একমত হন নেতারা। সেখানে জামায়াতের প্রসঙ্গ এলে তাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়। তবে কোনো প্রক্রিয়ায় জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

বিএনপি-সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন ইস্যুতে সরকার আগামী দু-এক মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কী পদক্ষেপ নেয়, সেটা পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি। দলটির শঙ্কা, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও চাওয়া উপেক্ষা করে সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। দেশ অস্থিতিশীল হতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে প্রয়োজনে কর্মসূচির দিকেও যেতে পারে বিএনপি।

বিএনপি কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের সময় ও পথনকশা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছিল। বৈঠকে বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের ফসল। সুতরাং এদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কর্মসূচি কিংবা বড় আন্দোলনে যাওয়া যাবে না। সে পরিস্থিতিও এখনও আসেনি। একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছেন তারা। সুতরাং তারা চান না যে, এই সরকার ব্যর্থ হোক। সামগ্রিক বিবেচনায় তাই সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী আগামী রোজার আগেই নির্বাচন দাবি করেছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের এমন অবস্থানকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে বিএনপি। দলটির কেউ কেউ বলেন, বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও তা যদি এক-দেড় মাস পেছায়, সেটা তেমন কোনো সমস্যা না। এক্ষেত্রে তাদের খুব একটা আপত্তি থাকবে না। তবে সেটা অবশ্যই জুন না।

বিএনপি নেতারা জানান, অতীতে যেসব দল যুগপৎ আন্দোলনে ছিল নির্বাচন ও বিভিন্ন ইস্যুতে, এসব মিত্রদের পরামর্শ নেওয়া হবে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বসা হবে। তবে তাদের সঙ্গে কৌশলে বোঝাপড়া করবে দলটি। এর পর আগের মতো যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে এসব কর্মসূচি বড় পরিসরে হবে না, ছোট পরিসরে হবে। এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশিদের কাছে তারা এমন বার্তা দিতে চায়, বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

নেতারা আরও জানান, সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো বড় কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে জনমত তৈরি করার জন্য সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালনের কথা ভাবা হচ্ছে। এর সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা ইস্যুও দাবির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। বিএনপি চায় ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈদিক দলের পরামর্শ নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চায়।

এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকারে থাকা লোকজন একে সময় একক কথা বলছেন, এতে করে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা নির্বাচন চাই। এ জন্য দ্রুত একটা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, নানা ইস্যুতে বিএনপি সব সময়ই আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে। সংস্কার ইস্যুতেও আলোচনা করেছে। এখন সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয় নিয়েই হয়তো আলাপ-আলোচনা করবেন। আমাদের কাছেও মতামত জানতে চাইবেন। বিএনপির চিন্তা সম্পর্কেও আমরা জানতে পারব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com