যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে কানাডায় মার্কিন পণ্য বয়কটের হিড়িক পড়েছে। দেশপ্রেমের অংশ হিসেবে স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মার্কিন পণ্য বর্জন শুরু করেছে, যা দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক টানাপোড়েনকে আরও তীব্র করে তুলছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, টরন্টোর একটি জনপ্রিয় পানশালা ‘ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ পাব’। প্রতিষ্ঠানটি তাদের মেন্যু থেকে সব ধরনের মার্কিন পণ্য সরিয়ে ফেলেছে। এতে নাচোস, উইংস এবং বিয়ারের মতো জনপ্রিয় খাবার ও পানীয় এখন কেবল কানাডার স্থানীয় উপাদান বা ইউরোপ ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্য দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে।
পানশালাটির ব্যবস্থাপক লিয়া রাসেল বলেন, আমাদের জন্য এটি একদমই স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের স্থানীয় ব্যবসাগুলোকে সমর্থন করতে চাই।
কানাডার বিখ্যাত অভিনেতা জেফ ডগলাস, যিনি একসময় ‘আই অ্যাম কানাডিয়ান’ বিজ্ঞাপনের মুখ ছিলেন। সম্প্রতি এক ভিডিওবার্তায় ট্রাম্পের ‘কানাডাকে ৫১তম রাজ্য বানানোর’ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ‘আমরা কারও ৫১তম কিছু নই,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভিডিওটি দ্রুতই কানাডাজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়।
মন্ট্রিয়লের একটি ক্যাফে তাদের মেন্যু থেকে ‘আমেরিকানো’ কফির নাম পরিবর্তন করে ‘কানাডিয়ানো’ করেছে, যা দেশপ্রেমের প্রতীকী প্রকাশ হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।
এমনকি, কানাডার সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ‘সিবিসি’ যখন ‘কানাডা কি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হতে পারে?’ শীর্ষক একটি আলোচনা অনুষ্ঠান প্রচার করে, তখন তা প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এটি ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ ও ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন কিছু শুল্ক প্রত্যাহার এবং কিছু শুল্ক ২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দিলেও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি জানিয়েছেন, কানাডাকে যথেষ্ট অসম্মান করা হয়েছে। ট্রাম্প আমাদের ৫১তম রাজ্য বলছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘গভর্নর’ বলে অভিহিত করছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক যুদ্ধের ফলে কানাডার অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। কানাডার বেশিরভাগ রফতানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে যায়। অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, শুল্ক বাড়তে থাকলে প্রায় ১০ লাখ কানাডীয় চাকরি হারাতে পারেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্য অনিশ্চয়তার কারণে কানাডার বিনিয়োগ বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তবে কানাডার সরকার শুল্কজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় কোভিড-১৯ মহামারির সময়কার মতো সহায়তা কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ হলো মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহিত ফেন্টানিল সমস্যা। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, কানাডা থেকে সামান্য পরিমাণে ফেন্টানিল গেলেও তা মার্কিন জনগণের জন্য বিপজ্জনক এবং ট্রাম্প প্রশাসন এটি বন্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ট্রাম্পের শুল্কনীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তিনি (ট্রাম্প) চান কানাডার অর্থনীতি ধ্বংস হোক, যাতে আমাদের দখল করা সহজ হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এই উত্তেজনা অনেক কানাডীয় নাগরিককে হতাশ করেছে। কানাডার অর্থনীতিবিদ রব গিলিজো বলেন, আমরা ১০০ বছর ধরে মিত্র ছিলাম। আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে থাকি এবং এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য গভীর হতাশার।
কানাডায় যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন পণ্য বয়কটের প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। কানাডীয় সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল নিউজ’ জানিয়েছে, কানাডীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন ভ্রমণ ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
কানাডার নাগরিকরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মার্কিন শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এই প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবেন। সূত্র: বিবিসি
Leave a Reply