মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি অপূর্ব দেহাবয়বে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। চমৎকার আকৃতি দান করেছেন। কত চমৎকার তার সৃষ্টি! দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কত নিখুঁতভাবে তৈরি করেছেন! আমাদের দেখার জন্য দিয়েছেন চোখ, শোনার জন্য কান, কথা বলার জন্য মুখ-জিহ্বা, চলার জন্য পা, কাজ করার জন্য হাত, ঘ্রাণ নেওয়ার নাক। মহান আল্লাহর দেওয়া এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কৃতজ্ঞতা সারা জীবন আদায় করেও শেষ করা যাবে না।
চোখের কথাই ভাবুন না, চোখ দিয়ে আমরা দেখি। যে চোখে দেখে না, তার কতই না কষ্ট। অনুরূপ জিহ্বার কথা ভাবুন একটু, খাবারের স্বাদ জিহ্বা দিয়ে আস্বাদন করি। জিহ্বায় খাবার পড়তেই সিগন্যাল পৌঁছে যায় মস্তিষ্কে। কত দ্রুতই না আমরা স্বাদ বুঝতে পারি। যদি চোখ না থাকত, জিহ্বা না থাকত মানুষ কিন্তু পরিপূর্ণ হতো না। সুন্দর এই দুটি জিনিস যিনি দিলেন। আমরা তার শোকরিয়া কতটুকু আদায় করি? এই অঙ্গ দুটির কতটুকু সদ্ব্যবহার করি? মহান আল্লাহ যেভাবে ব্যবহার করতে বলেছেন এবং রাসুল (সা.) যেভাবে ব্যবহার করেছেন সেভাবে আমরা ব্যবহার করি কি না, সেটাই প্রশ্ন। না করলে সেটার পরিণাম মোটেই ভালো নয়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলেছেন। দৃষ্টি সংযত রাখা মানে সেই জিনিস দেখা যাবে না, যেটা দেখা ইসলাম নিষেধ করেছে। তবুও যদি দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে তা সরিয়ে নিতে হবে। হঠাৎ বা অনিচ্ছা বা বেখেয়ালে এমন জায়গায় দৃষ্টি গেল, যেটা দেখা জায়েজ নেই, এক্ষেত্রে করণীয় হলো, প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয়বার দেখা যাবে না। দৃষ্টি সরিয়ে নিলে সেটার সুফল আছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যার জন্য যা দেখা জায়েজ নেই, সেখানে যদি কোনো মুসলমানের দৃষ্টি পড়ে এবং দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এ অবস্থায় মহান আল্লাহ তার ইবাদাতে বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন। (মুসনাদে আহমদ)
জিহ্বা আল্লাহর অশেষ নেয়ামত। রাসুল (সা.) অসংখ্যবার জিহ্বার হেফাজতের কথা বলেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের নিশ্চয়তা দেবে (অর্থাৎ এ দুটোর সঠিক ব্যবহার করবে), আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। (সহিহ বুখারি)
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, বনি আদমের অধিকাংশ গুনাহ তার জিহ্বার মাধ্যমে হয়ে থাকে। ওমর (রা.) বলেছেন, যে জিহ্বা সংযত রাখে মহান আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন। কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে চুপ থাকতে হবে। অনর্থক কথা বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মহান আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা অনর্থক কথা-বার্তা থেকে বিমুখ।’ (সুরা মুমিনুন ৩) চোখ ও জিহ্বার অপব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে সবার সতর্কতা কাম্য।
Leave a Reply