1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৮ অপরাহ্ন

সাগরের বুকে নতুন পর্যটন স্পট শিপ চর

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫

‘ভাই শিপের চর গেছেন। দারুণ এক জায়গা।’ দুই বছর আগে পটুয়াখালীর রাঙ্গবালী উপজেলার চর মোন্তাজের এক জেলে এভাবেই আমাকে শিপ চর সম্পর্কে প্রলুব্ধ করেছিলেন। মাঝ বয়সী এই জেলের হাসিমুখে সেই প্রস্তাবের নেপথ্য ছিল টাকা অর্জন। কারণ আমাকে সেখানে নিতে পারলে ট্রলার ভাড়া বাবদ ভালোই লাভ হবে তার। তবে তখন সেখানে যাওয়ার মতো সাহস ও টাকা কোনোটাই ছিল না। কারণ সোনার চর, চর হেয়ার, কলাগাছিয়ার চর এবং চর তুফানিয়া ঘুরে টাকা শেষ করেই ঢাকায় ফেরা আমার সপ্তম শ্রেণীতে পড়া ছেলেকে নিয়ে। সে বছরই যখন পরের মাসে ভোলার চর কুকরি মুকরি, ঢাল চর ও তারুয়ার চর গেলাম তখন কুকরি মুকরির জাকির বকস মাঝি আমাকে তথ্য দিলেন শিপ চর সম্পর্কে। জানালেন দুই ঘণ্টা লাগবে ট্রলারে শিপ চর যেতে। ট্রলার ভাড়া গুনতে হবে চার হাজার টাকা। তখনো সেই প্রস্তাব পাই তিন চর ঘুরে পকেটের টাকা শেষ হওয়ার পর। সেবার অবশ্য জাকির মাঝিকে বলে রেখেছি তিনি যদি পরে কখনো শিপের চর যান তখন যেন এই চর সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত জানান। ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ সালে জাকির মাঝি টাঙ্গাইলের করটিয়া কলেজের ১২ জন উঠতি পর্যটককে নিয়ে যান শিপের চরে। তার কাছ থেকে জানা গেল এই শিপের চরের বিস্তারিত।

বঙ্গপোসাগরে জেগে ওঠার অপেক্ষায় বেশ কিছু ডুবোচর, যা ২০২২ সালে তেঁতুলিয়া নদীর মোহনা পেরিয়ে নয়াভিরাম চর তুফানিয়াতে যাওয়ার সময় দেখেছিলাম। তেমনি এক ডুবোচর ছিল শিপ চর। এখন তা সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের বিশ্রামের জায়গা। কিছু পর্যটকের জন্য আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। মাঝি জাকির তথ্য দেন, ‘ভোলার চর ফ্যাসনের চর কুকরি মুকরি থেকে ৩০/৩৫ কিমি দক্ষিণ- পূর্ব কোণে এবং ঢাল চর থেকে বরাবর দক্ষিণে অবস্থান এই শিপের চরের।’ এই দ্বীপে ভোলার এই দুই চর থেকে যেমন যাওয়া যায় তেমনি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ থেকেও যাওয়া যায়। যাওয়ার উপায় মাছ ধরার ট্রলার। স্পিট বোটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সাগরের ঢেউ যেকোনো সময় উল্টে ফেলতে পারে স্পিড বোটকে। উল্লেখ্য, কুয়াকাটা থেকে ১৫ কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিয়ে চর বিজয়ে যাওয়া যায় স্পিড বোটে। তবে তা সম্ভব নয় শিপ চরে যাওয়ার ক্ষেত্রে।

জাকির মাঝির দেয়া তথ্য, ২০ বছর আগে জেগে উঠেছিল এই শিপ চর। জাকিরসহ চর কুকরি মুকরির অন্য জেলে এবং চর মোন্তাজের জেলেদের মতে, একসময় একটি জাহাজডুবি হয়েছিল এখানে। সেই ডুবে যাওয়া জাহাজকে কেন্দ্র করেই এই চরের সৃষ্টি। তাই শিপ বা জাহাজের নামেই এই শিপ চর বা শিপের চর। এখনো জাহাজের একটি অংশের মাথা মাটির ওপর দেখা যায়। জাকির মাঝি জানান, মাঝে ১০/১২ বছর আগে একেবারেই সাগরে তলিয়ে গিয়েছিল এই শিপের চর। তলিয়ে যাওয়ার সময় এই বিশাল চরে ছিল চর কুকরি মুকরির মতো বড় বড় গাছের ঘন বন। সাথে ছিল প্রাণীও। চরটি তলিয়ে যাওয়ার সময় সবই সাগরের পানিতে হারিয়ে যায়। তিন/চার বছর আগে ফের জেগে ওঠে এই চর। তবে এখন আয়তন কমেছে। ভাটার সময় এক কিলো মিটারের মতো দৃশ্যমান থাকে এই চর। আর জোয়ারের সময় আধা কিলোমিটারের মতো শুষ্ক থাকে।

অবশ্য এই শিপ চর কুয়াকাটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চর বিজয়ের মতো সমুদ্রের জলসীমা থেকে সামান্য উচ্চতার নয়। প্রায় তিন চার ফুট উঁচু শিপ চর। এই চরে গেলে দেখা মিলবে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার। সাথে অতিথি পাখি এবং সামুদ্রিক পাখির। শিকারিমুক্ত এই পাখিগুলো। ফলে তাদের অবাধ বিচরণ।
দুই বছর হলো এই শিপ চরে শৌখিন কিছু পর্যটকের যাওয়া শুরু। তাও খুব কম। পুরো শীতের সিজনে সর্বোচ্চ ৩০/৪০ জন পর্যটক যান চার দিকে গভীর সমুদ্রবেষ্টিত এই শিপ চর দেখতে। তারা সেখানে কয়েক ঘণ্টা থেকে ফিরে আসেন। তবে এবারই টাঙ্গাইলের ১২ জনের এই পর্যটক গ্রুপ সেখানে রাত্রি যাপন করেছে। সাথে অবশ্য তারা পানি, ডাল-চাল, জ্বালানি নিয়ে যান। জাকির মাঝির মতে, ‘আমি শীত কিম্বা বর্ষা বিভিন্ন সময়েই শিপ চরে গিয়েছি; কিন্তু এবারই প্রথম পর্যটকদের সাথে রাত্রি যাপন করলাম। বেশ ভালোই লেগেছে সেখানে রাত্রি যাপন করতে।’ যেহেতু গভীর সাগরে এই চরের অবস্থান তাই এই স্থান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। পর্যটক হাবিবুল বাশার জানান, ‘আমি দারুণ উপভোগ করেছি এই শিপ চরের সৌন্দর্য। লাল-কাঁকড়া আছে। সাথে পাখি। সে সাথে এই দ্বীপ থেকে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।’

তবে পর্যটকদের দাবি, যদি সেন্টমার্টিনের মতো বড় জাহাজে করে এই দ্বীপে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে প্রচুর পর্যটক সেখানে যাবেন। সে সাথে চর বা দ্বীপটিতে যে জীববৈচিত্র্য আছে তা যেন নষ্ট না হয়, লক্ষ রাখতে হবে সে দিকে। মালদ্বীপে এ ধরনের ছোট ছোট দ্বীপই অতি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। বাংলাদেশ সরকারও যদি চর তুফানিয়া এবং শিপ চরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে এবং সেখানে যাওয়া-আসার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে দেশের মানুষ বিনোদনের আরেকটি স্থান পাবে। সাথে কিছু লোকের বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com