প্রতিমাসেই বড় হচ্ছে রাজস্ব আহরণের ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জুলাই-নভেম্বর সময়কালে ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বছর শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বাধাগ্রস্ত হওয়া রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব আহরণে এই বড় ধরনের ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তবায়নে চাপ বাড়ছে। এর ফলে সরকারকে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হবে, যা বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে বেসরকারি খাতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে।
জানা গেছে, জুলাই-নভেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৬২ শতাংশ কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা এই লক্ষ্যমাত্রাকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতিতে রাজস্ব আহরণ করে এত বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অসম্ভব। এজন্য আধুনিকায়ন ও পদ্ধতি সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
এনবিআর বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন এবং করদাতাদের হয়রানি এড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্ষমতার পালাবদলের ধাক্কা রাজস্ব খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে কোটা আন্দোলন, গণ-আন্দোলন এবং কারফিউসহ সাধারণ ছুটির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির ছিল। ফলে কলকারখানা ও অফিস বন্ধ থাকায় শুল্ক ও কর আহরণে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে অতিরিক্ত বেগ পেতে হচ্ছে বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।
লক্ষ্যমাত্রা থেকে রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার বিষয়ে এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য রাজস্ব আহরণে গতি কম। অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আহরণ এমনিতেও একটু কম হয়। অন্যদিকে, বিগত সরকারের প্রকৃত তথ্য ‘ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর’ প্রবণতা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বের হয়ে আসার ওপর জোর দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সরকারের জন্য অতীতের প্রশাসনিক জটিলতা ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ছাড়া রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।
Leave a Reply