২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকেই কঠোর নজর রাখছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিশেষ করে চলতি বছর শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতে যে বই হাতে পেয়েছিল, সেই বই বছর শেষ হওয়ার আগেই ছিঁড়ে গেছে অথবা বইয়ের সেলাই খুলে সেগুলো পড়ার অনুপযোগী হয়ে গেছে। কিন্তু এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য যে বই ছাপার জন্য প্রেসে দেয়া হয়েছে সেখানে মান যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে কোনো ছাড় না দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এনসিটিবি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে যেসব প্রেসের সাথে প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিকের বই মুদ্রণের জন্য চুক্তি হয়েছে, সেখানে কাগজের পুরুত্ব এবং উজ্জ্বলতার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারের বইয়ের কাগজের মান (পুরুত্ব, উজ্জ্বলতা এবং বাস্টিং) বাড়ানোর শর্ত দেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে এবার শুধু কাগজের মানের ক্ষেত্রেই নয়; বরং দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুতেও আনা হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব এবং এর পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ সবই যুক্ত হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকে। ফলে নতুন বইয়ের অবয়ব এবং বিষয়বস্তু নিয়েও সন্তুষ্ট থাকবে শিক্ষার্থীরা। একই সাথে বইয়ের সামনের ও পেছনের প্রচ্ছদে নতুন স্লোগান থাকবে। আরো থাকবে দেশাত্মবোধক নানা শ্লোক। প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক এমনকি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়েও জুলাই-আগস্টের চমকপ্রদ গ্রাফিতি যুক্ত থাকবে শ্রেণিভিত্তিক বিভিন্ন বইয়ের পাতায় পাতায়।
সূত্র মতে, আগামী বছরের জন্য প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ের কাগজের পুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ জিএসএম, উজ্জ্বলতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ এবং বাস্টিং নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬। অপর দিকে মাধ্যমিকের বইয়ের জন্য কাগজের পুরুত্ব নির্ধরণ করা হয়েছে ৭০, উজ্জ্বলতা ৮২ এবং বাস্টিং ১৬। তবে চলতি বছর শিক্ষার্থীদের হাতে যে মানের বই দেয়া হয়েছিল তা ছিল একেবারেই মানহীন। তাই নতুন বছরে বইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকেই কঠোর হচ্ছে এনসিটিবি। এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, ২০২২ সালের কারিকুলাম পরিবর্তন করে ২০২৫ সালের পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে ২০১২ সালের কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে। ফলে মাধ্যমিকে বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। আবার এ বছরই প্রথম দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই ছাপানো হচ্ছে। কেননা তারা আগে নবম শ্রেণীর বই পড়েই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিত; কিন্তু আগামী বছরের জন্য নতুন কারিকুলাম (২০১২ সালের) চালু করায় বর্তমানে যারা নবম শ্রেণীতে পড়ছে তারা আগামীতে এক বছর পড়েই অর্থাৎ দশম শ্রেণীর নতুন বই পড়েই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এনসিটিবি’র উৎপাদক শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২৫ সালের জন্য মাধ্যমিক স্তরের ৩০ কোটি ৯৫ লাখ ৪১ হাজার ৪৮৬ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। আর প্রাথমিক স্তরের জন্য ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। এসব বই ছাপানো ও বিতরণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।
পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গতকাল বুধবার এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা শুরু থেকেই পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে সতর্ক রয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের নিজস্ব মনিটরিং টিমগুলোকে বই মুদ্রণের কাজ পাওয়া সব প্রেসকে নিয়মিতভাবে ভিজিটের আওতায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিও আমাদের কাজে সহযোগিতা করছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার বছরের শুরুতে একসাথে সব ক্লাসের সব বই হয়তো দেয়া সম্ভব হবে না। তবে আমাদের টার্গেট জানুয়ারি মাসের মধ্যেই মানসম্পন্ন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারব।
Leave a Reply