সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানির পর আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতে সরকারের কী পদক্ষেপ তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন উপস্থান করে ইসকন নিষিদ্ধ ও ইমার্জেন্সি ঘোষণার প্রার্থনা পেশ করে আজ বুধবার উচ্চ আদালতের স্বপ্রণোদিত আদেশ চায় এক আইনজীবী। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে আদালতে বক্তব্য দেন। ওই বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সরকারের নেয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে কাল অগ্রগতি জানাবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ‘আজ একজন আইনজীবী পত্রিকা নিয়ে আদালতের দৃষ্টিতে আনেন। সুয়োমোটো রুল ইস্যু করার জন্য। তার প্রার্থনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ইসকনকে যেন নিষিদ্ধ করা হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে যাতে নির্দেশ দেয়া হয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং ইমার্জেন্সি ঘোষণা করানো, আগামী অন্তত দুই সপ্তাহ। এই পরিস্থিতে আদালত আমাকে ডেকে পাঠান। আমি আদালতের সামনে গিয়ে বলি ইসকনের ইস্যুটা দুর্ভাগ্যজনক। যে আইনজীবী এটা এনেছেন তার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এই রক্তক্ষরণ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ের। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এই ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ। সরকার গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটিকে দেখছে, এটার যথযাথ আইনি পদক্ষেপ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সংগঠন রেজিস্ট্রার্ড কি না, এই সংগঠন নিষিদ্ধ হবে কি না, কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এই সবগুলো সরকারের পলিসি ডিসিশন। সরকার এটার খোঁজ-খবর নিয়ে যথাযথ আইনিভাবে এটা দেখবে। সবকিছু আদালতের সামনে এসে সুয়োমোটো নিষিদ্ধ করতে হবে- এই প্রক্রিয়ার সাথে আপনাদের (আদালতের) জুডিসিয়াল রিভিউর অ্যাকশন যাওয়া উচিত না বলে আমি মনে করি। এটা সাংবিধানিক আইনের সাথে কতটুকু যাবে, এটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এ কারণে এটা প্রয়োজন মনে করছি না। এটা প্রিম্যাচিউর। দেখেন, সরকার কী করছে। সরকার কিভাবে হ্যান্ডেল করছে। সব পর্যালোচনা করে তারপর যদি হয় তখন প্রোপার ওয়েতে আসলে দেখা যেতে পারে। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, আদালত আমাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট। আদালত বললেন, কতটুকু প্রগ্রেস আছে কাল সকালে জানাতে। আমি জানাব।’
চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নামে এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সাথে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষের সময় নির্মম হত্যার শিকার হন এই আইনজীবী। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আদালতের অদূরে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফ সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি)। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। পাশাপাশি হাইকোর্টের আইনজীবীও ছিলেন তিনি।
এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে আনা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এলাকার বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও মসজিদের কাচ ভাঙচুর করে তারা। এ সময় ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
আইনজীবী হত্যার ঘটনার ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের আইনজীবী ও বিভিন্ন সংগঠন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। আজ সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আইনজীবী সমিতিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হত্যাকারী ইসকনের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও সংগঠন প্রতিবাদ ও সমাবেশ করছেন।
চট্টগ্রাম আদালতে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আজ সকালে সাড়ে ১০টার দিকে আদালত চত্বরে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে সেখানে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী নেতারা। তারা সাইফুল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। প্রথম জানাজা শেষে সাইফুল ইসলাম আলিফের লাশ নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ হাজার হাজার জনতা।
সূত্র : বাসস
Leave a Reply