1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

চতুর্মুখী সংকটে চামড়াশিল্প

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের পরই রপ্তানিতে মজবুত অবস্থান ছিল চামড়াশিল্পের। বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ড বাংলাদেশের উৎপাদিত চামড়া থেকে পণ্য তৈরি করত। চামড়া এবং চামড়াসামগ্রী রপ্তানি করা হয় জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, রাশিয়া, ব্রাজিল, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে। গেল চার বছর ধরে বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানির চিত্র হতাশাজনক। এর মূল কারণ বাংলাদেশি ট্যানারিগুলোয় কমপ্লায়েন্স অর্থাৎ মানসম্পন্ন পরিবেশসম্মত কারখানা না থাকা। শ্রমিকরা কাজ করছে দূষিত পরিবেশে।

কারখানাগুলোকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সরানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে জোর দাবি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি পল্লী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরী প্রস্তুত না করে ২০১৬ সালে একদিনের আলটিমেটামে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কমতে থাকে চামড়া রপ্তানি। বর্তমানে তলানিতে ঠেকেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনার থাবা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, গত বছরের দেশের চামড়া খাতে রপ্তানি কম হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ২৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কমেছে প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও চামড়াজাত জুতার রপ্তানি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারিগুলোয় এখনো অবিক্রীত রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার চামড়া। তাদের মতে, এবারের কোরবানির কাঁচা চামড়া কেনার বিষয়টি প্রায় পুরোটাই নির্ভর করছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর।

মূলত চীন এ দেশের প্রসেসড লেদারের সবচেয়ে বড় বাজার। সেখান থেকে হাত ঘুরে যায়, ইতালি, জার্মানিসহ উন্নত দেশগুলোয়। কিন্তু করোনার প্রকোপে এক রকম বন্ধই হয়ে গেছে চামড়া রপ্তানি। চলতি বছর ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের, যা লক্ষ্যমাত্রা ও গতবারের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, প্রায় ৬০০-৭০০ কোটি টাকার চামড়া অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা এখনো কোনো এলসি পাইনি। যার কারণে ট্যানারি মালিকরা কী প্রস্তুতি নেবে তা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে।

চামড়া খাতে গত এক দশকে জুতা ও অন্য চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিনিয়োগও। মন্দার কবলে পড়া বিশ্ববাজারে হোঁচট খেয়েছে এসব পণ্যের রপ্তানিও। বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাগ, বেল্ট, জ্যাকেটের মতো পণ্যের রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২২ কোটি ৫ লাখ ডলা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ শতাংশ কম। সবচেয়ে আশার পথ দেখানো জুতার রপ্তানি কমেছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চামড়া খাতের মূল সমস্যা উৎপাদন প্রক্রিয়ার দূষণ, যার সঙ্গে করোনা বাড়তি সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, যদি উচ্চমাত্রায় চামড়া রপ্তানির সুযোগ করে দেওয়া হয় তা হলে হয়তো ঋণ ব্যবহার না করেও চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

গত কোরবানি ঈদেও খুচরা ও সাধারণ বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দাম না পাওয়ায় চামড়ার বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নষ্ট হয় লক্ষাধিক পশুর চামড়া।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি আয় হয় ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।

ধারাবাহিক রপ্তানি কমার মূল কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা বলছেন, সাভারের শিল্পনগরী প্রস্তুত না করেই হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর করা। তারা অভিযোগ করছেন, গেল তিন বছরেও সাভারের শিল্পনগরী এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। প্লটের জমির দলিল না পাওয়ায় তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেও পারছে না।

অন্যদিকে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো রেড জোন হওয়ায় সেগুলো কোনো সমাধান করতে পারছে না। তারা এখন শূন্য হাতে। পরিস্থিতিতে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করছে সামনের কোরবানির পশুর চামড়া কেনাকাটা।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, করোনার কারণে সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশের পুরো অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এতে চামড়া খাত আরও বিপাকে পড়েছে। চামড়া খাতের সংকট ২০১৭ সালে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ভুলের কারণে এ খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিসিকের কারণেই এ খাত পিছিয়ে পড়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা মতো পরিবেশবান্ধব কারখানার চামড়া দিতে না পারায় ব্যবসা হারাতে হয়েছে। ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য দেশে চলে গেছেন।

বিসিকের ভুলে সাভার চামড়া শিল্পনগরী কমপ্লায়েন্স না হওয়ায় গত কয়েক বছর বেশিরভাগ চামড়া অবিক্রীত থাকায় নষ্ট হয়েছে। হঠাৎ করে ট্যানারিগুলোর কাজ বন্ধ থাকায় এবং কমে যাওয়ায় মজুদ চামড়ায় রাসায়নিকের কার্যকারিতা হারিয়ে নষ্ট হয়েছে। ট্যানারিশিল্পে বেশি ব্যয় হয়েছে কারখানা স্থাপনে। এ কারখানা নির্মাণে ব্যাংক ঋণ দেয়নি। শিল্পনগরীর জায়গা বিসিক এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। হাজারীবাগের জমি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর এখন পর্যন্ত নন-কমপ্লায়েন্স থাকার কারণে কারখানাগুলোয় উৎপাদন চালু করেও চামড়া বিক্রি করা যায়নি। এ সময়ে ইউরোপের বড় বাজার হারাতে হয়েছে।

এবারের চামড়ার ক্রয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, এবার কোরবানির পশু জবাই কম হবে। তা ছাড়া ট্যানারিগুলোতে চামড়া মজুদ আছে। এ অবস্থায় চামড়া সংগ্রহ কম হতে পারে। এখন বিশ্ববাজারে চামড়ার দর কম। রপ্তানি সীমিত হয়ে পড়েছে। দেশের বাজারে এখন কম দামে বেচাকেনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার চামড়ার দর কম হবে। এর পরও গত ছয় মাসের রপ্তানি মূল্য পর্যালোচনা করে মূল্য নির্ধারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র নাথ পাল আমাদের সময়কে বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চীনের। করোনা ভাইরাসের কারণে তারা বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। ফলে কিছু টেকনিক্যাল কাজ বাকি রয়েছে। অবশ্য তারা বর্তমানে দেশে ফিরে এসেছেন। আগামী দু’মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, নানাবিধ কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com