আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এক বছরে দেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা শতকরা হিসেবে ৩৯ ভাগ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। তারা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলেই বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। আর এ কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে।
যে হারে রেমিট্যান্স বাড়ছে তা অব্যহত থাকলে বছর শেষে ২৫ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে। গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আগস্ট মাসের রিজার্ভের এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রোস বা মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি মার্কিন ডলার (২৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২ হাজার ৬০ কোটি ডলার (২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন)।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশে গুম, খুন, জেল-জরিমানাসহ স্বৈরাচার সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল প্রবাসীরা। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকিং চ্যানেলে আবার রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিখ্যান থেকে দেখা যায়, ১ থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র সাড়ে ৯ কোটি ডলার। ৪ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এসছিল ৩৮ কোটি ডলার। আর ১১ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় রেমিট্যান্স এসেছে ৬৫ কোটি ডলার। আর গত ২০ আগস্টে এক দিনে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এসেছে বাকি রেমিট্যান্স। সবমিলিয়ে গত আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি ১০ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি।
গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়। ওই সময় দেশে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয়ে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর আবার দেশ গঠনে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী। এর ফলে আবারো প্রবাসী আয় এখন বাড়তে শুরু করেছে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
Leave a Reply