বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেছেন, বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়।
তিনি বলেন, ‘বিজয়ের এই আনন্দঘন সময়, রাহুমুক্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিরোধ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন না। অর্জিত বিজয় যাতে লক্ষ্যচ্যুত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান।’
গৌরবজনক ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাহসী ছাত্র জনতাকে বিরোচিত অভিনন্দন জানিয়ে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাহুমুক্ত হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই বাংলাদেশকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারবে না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বিজয়ের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি আজ সেইসব মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, এই গণবিপ্লবে যারা তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। এভাবে গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনকালে তারা প্রিয়তম পিতা হারিয়েছেন, অনেক স্ত্রী স্বামী হারিয়েছেন, গুম, খুন, অপহরণ করে অসংখ্য মায়ের বুক খালি করে দেয়া হয়েছে। আপনাদের সন্তানের শহীদি মৃত্যু, স্বজনদের ত্যাগ, তিতিক্ষায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ।’
জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব সফল করতে গিয়ে অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাসায়, হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে যন্ত্রণাবিদ্ধ সমস্ত সময়ে ভালোবাসা নিয়ে আপনাদের পাশে আজ সারা বাংলাদেশ। খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক মানুষ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন, কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের কারামুক্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা যাতে আবারও স্বাভাবিকভাবে হলে, হোস্টেলে, ক্লাসে ফিরতে পারে এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে, আশা করি সরকার সবার আগে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে, সাড়ে বারো কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের লুষ্ঠিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। এর পর একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেদিন বাংলাদেশের সাড়ে বারো কোটি ভোটার নিরাপদ, নিশ্চিন্তে ভোট দিয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, রাষ্ট্র, সরকার, শাসন, প্রশাসনে সাম্য মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, সর্বোপরি একটি গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে তখনই জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের চূড়ান্ত সফলতা আসবে। জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছুতে তাই যথা সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপি সহ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সহযোগিতা করবে।’
‘৫২, ‘৭১ কিংবা ‘৯০-এর মতো ছাত্র জনতা আবারও একটি বিজয়ের ইতিহাস রচনা করেছে উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীকে আবারও বীরোচিত অভিনন্দন জানান।
সূত্র : বাসস
Leave a Reply