বিশ্বব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ৫০ বছরের পেট্টোডলার চুক্তিটি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। গত ৯ জুন রোববার চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
ব্রিকস নিউজ এক্সে এক পোস্টে লিখেছে, ’নতুন কোনো সমঝোতা না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৌদি আরবের ৫০ বছরের পুরনো পেট্রোডলার চুক্তিটি শেষ হয়ে গেছে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘সৌদি আরব এখন থেকে কেবলমাত্র মার্কিন ডলারের বদলে চীনা আরএমবি, ইউরো, ইয়েন, এবং ইউয়ানসহ বিভিন্ন মুদ্রায় তেল বিক্রি করবে।’
পেট্রোডলার কোনো মুদ্রার নাম নয়। অপরিশোধিত তেল রফতানি মার্কিন ডলারে হয় বলে এর এই নামরকরণ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০-এর দশকে এই সুবিধাটি লাভ করে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল রফতানিকারক দেশগুলো ওই সময় থেকে কেবল মার্কিন ডলারের মাধ্যমে তেল রফতানি করে আসছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতি এবং ভূরাজনীতিতে ডলার বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে যায়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণের বিনিময়ের মাধ্যমে ডলারের মূল্যবান নির্ধারণ করত। প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ধরা হতো ৩৫ ডলার। কিন্তু ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ত্যাগ করে। পেট্রোডলার সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে।
তবে চুক্তিটি সই হয় ১৯৭৪ সালের ৮ জুন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং সৌদি আরবের প্রিন্স ফাহদ ইবনে আবদেল আজিজ চুক্তিটি করেন। দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা হিসেবে চুক্তিটি হয়।
চুক্তিটিতে নিশ্চিত করা হয় যে ওপেক সদস্যরা তেল বিক্রি করবে মার্কিন ডলারে। এর বিনিময়ে সৌদি আরবকে সামরিক সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
এখন এই চুক্তির অবসানের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা বদলে যেতে পারে।
পেট্রোডলার নবায়ন না হওয়ায় বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সিতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের চাহিদা কমে যেতে পারে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে, সুদের হার আকাশচুম্বি হতে পারে, মার্কিন বন্ড বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে বিশ্বে নতুন সমীকরণের সৃষ্টি হতে পারে। সৌদি আরব এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীন এবং ব্রিকস দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।
সূত্র : সিয়াসত, ডেইলি গার্ডিয়ান এবং অন্যান্য
Leave a Reply