উপযুক্ত সময়ে জবাব দেয়ার হুঙ্কারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে সাবধান করেছে ইরান। সিরিয়ায় ইরানের কন্স্যুলেটে ইসরাইলের নৃশংস হামলার পর শনিবার ইসরাইলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এ হামলার বিষয়ে তারা জাতিসংঘকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, তাদের কূটনৈতিক মিশন আক্রান্ত হলে তার বদলা নেয়ার আইনগত অধিকার তাদের আছে।
ওদিকে ইরানের হামলার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। সতর্কতা জারি করা হয়েছে ইসরাইলে, ইরানে। ইসরাইল যদি ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করে, তবে তাতে অংশ না নেয়ার কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে ইসরাইল দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছে সময়মতো এ হামলার জবাব দেয়া হবে। এ হুমকিতে ইসরাইলকেই উল্টো হুমকি দিয়েছে ইরান। তারা বলেছে, শনিবারের হামলার জবাবে ইসরাইল যদি ইরানে হামলা চালায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর অর্থে জবাব দেয়া হবে। যার অর্থ হলো একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ।
এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই চিরশত্রুর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। তার মধ্যে টেনে আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিজেদের বাহিনী এবং ইসরাইলকে সুরক্ষিত রাখতে দ্বিধা করবে না যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে মধ্যপ্রাচ্যের এই অবস্থা। ইসরাইলের অভিযোগ, হামাসকে এবং লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সমর্থন ও অস্ত্র দিচ্ছে ইরান। ফলে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। এর ধারাবাহিকতায় গত ১লা এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কন্স্যুলেটে বোমা হামলা করে গুঁড়িয়ে দেয় ইসরাইল। এতে ইরানের অভিজাত রেভ্যুলুশনারি গার্ড কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা সহ কমপক্ষে ৭ জন সদস্য নিহত হন। কন্স্যুলেট ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। এর বদলা নেয়ার প্রকাশ্য হুমকি দেয় ইরান। ‘ট্রু প্রমিজ’ নামের অপারেশনের মাধ্যমে তারা শনিবার ইসরাইলে হামলা চালায়। এতে ব্যবহার করা হয় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। ইরানের দাবি তা ইসরাইলের সামরিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ইসরাইলের দাবি এসব ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে ইসরাইল। এক্ষেত্রে তাদেরকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও জর্ডান। দক্ষিণ ইসরাইলে বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে ইরান হামলা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিকভাবে চলছে বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে আহত হয়েছে ৭ বছর বয়সী একটি শিশু।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের দাবি তারা হামলা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলে সামরিক অভিযান শেষ হয়ে যায়নি। তার ভাষায়, প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইসরাইলি একজন নিরস্ত্র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে চ্যানেল ১২ টিভি বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে বড় রকমের জবাব দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইসরাইলে তাদের হামলা ছিল সীমিত এবং আত্মরক্ষামূলক।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল থেকে হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ চীন সফরকালে বলেছেন, উত্তেজনা আরও ছড়িয়ে পড়া রোধে আমাদেরকে সব কিছু করতে হবে। আমরা সবাইকে, বিশেষ করে ইরানকে এই ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সতর্ক করতে পারি। মধ্যপ্রাচ্যে আর উত্তেজনা চায় না বলে ইরানকে সতর্ক করেছে তুরস্ক।
Leave a Reply