ঈদের আগের দিন প্রস্তুতিটা ভালোমতো সেরে নেওয়া জরুরি। এই দিনটিতেই রমজানের মাসভর ক্লান্তি দূর করার সুযোগ না দিয়েই ব্যস্ত দিন এসে হাজির হওয়ার ঘোষণা দেয়। আকাশে চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পরের দিনের প্রস্তুতি নেন। প্রথা অনেকটাই এমন, কর্তা গেলেন বাজারে আর গিন্নি ঢুকলেন হেঁশেলে। অনেক সময় দুজনকেই সমন্বয় করে দেখতে হয় সব। কিন্তু তাড়াহুড়ো করেই অনেকে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন বা বড় কোনো ঝামেলা বাধিয়ে ফেলেন। এমন না করে আস্তেধীরে কাজ করতে হবে। আমরা আপনাকে একটা সহজ রোডম্যাপ দিতে পারি। উৎসবের ছোঁয়া লাগলে তাতেই শরীর ডোবান।
প্রথম নজর ঘর গোছানোয়
অনেকে সবার শেষে ঘর গোছানোর প্রস্তুতি নেন। এমনটা ভুল। রান্নাঘর সবার শেষে পরিষ্কারের চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু অন্যান্য ঘর প্রথমে গুছিয়ে নিন। ঘরটা গোছানো হয়ে গেলে আপনার মনও শান্ত হবে অনেকাংশে। মন শান্ত হলে অন্য কাজেও করতে পারবেন সহজে। ঘরের আসবাব থেকে শুরু করে বিছানার চাদর বদলে নিন। জানালা বা অন্যান্য অংশও পরিষ্কার করুন। ঘরে একটি তাজা আবহাওয়া ও আবহ আনতে তাজা ফুল রাখতে পারেন।বাড়ির অন্যদের সহযোগিতা নিন এই কাজের জন্য। কারণ একা তো করা সম্ভব নয়। ঈদের আগে পরিবারের সবার মধ্যে উত্তেজনা থাকে। তাই সবাই মিলে ঘর গোছান।
ঈদের দিনের পোশাক প্রস্তুত করুন
ঈদের দিন সকালে আপনাকে ব্যস্ত থাকতেই হবে। তাই ঈদের জায়নামাজ, পোশাক বের করে রাখুন। তাহলে পরের দিন আর দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। ছোটবেলার অভিজ্ঞতায় আছে, অনেক সময় জায়নামাজ খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে যাওয়ায় দেরি হয় নামাজে। সেই ছোটবেলা থেকে শিক্ষা নিন। এমনকি ইদের দিন পরিবারের প্রত্যেকের পোশাক আলাদা করে রাখুন। যদি ইস্ত্রি করা না থাকে তাহলে আগেই সব করে রাখুন। দর্জিবাড়িতে কোনো কাজ থাকলে সেটাও করিয়ে আনুন। পরে আফসোস করার সময় পাবেন না।
তালিকা করুন
এবার ধীরে সুস্থে বসে ভাবুন। ঈদের দিন আপনি কী কী মেনু করবেন। আপনার মেনুর ওপর নির্ভর করে একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। তালিকায় থাকা সামগ্রীগুলো বাজার থেকে আনান। গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। আজকাল পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজই ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায় না। এ বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ সবসময়ই রাখতে হয়।
এবার যান হেঁশেলে
ঈদের আগে রান্নার কিছুটা প্রস্তুতি সেরে রাখাই যায়। সেজন্য ফ্রিজ পরিষ্কার করা জরুরি। ফ্রিজ, ওভেন ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভালোভাবে পরিষ্কার করে রান্নাঘরের ভেতর জমে থাকা সব ময়লা পরিষ্কার করে ফেলুন। একটা পলিতে সব ময়লা জমিয়ে রাখুন। সেগুলো পরে একসঙ্গে ফেলে দেবেন। রান্নাঘরে মসলা, কাটাকুটির যন্ত্রপাতি সবই হাতের কাছে গুছিয়ে রাখুন। ঈদের দিন ব্যস্ততায় তালগোল যেন না পাকায় সেভাবেই প্রস্তুত করুন।
রান্নার প্রস্তুতি আগের দিনেই
ঈদের আগের দিন থেকেই রান্নার প্রস্তুতি সেরে নেওয়া যেতে পারে। রান্না হয়তো করলেন না, কিন্তু ইদের আগের দিন অনেক কিছুই করে ফেলা যায়। আগের দিনই মাংস প্রস্তুত করা যায়। বিশেষত অনেক রেসিপি করতে গেলে মাংস মেরিনেট করে রাখতে হয় সারারাত। এভাবে আপনার মেনু অনুযায়ী খাবারের উপকরণগুলো তৈরি করে রাখুন। ফ্রিজের ভেতর মাংস রাখেন অনেকে। কিন্তু এমনটা না করাই ভালো। ঈদের আগের দিন ফ্রিজ পরিষ্কার করার পর মোটা পলিতে মাংস রেখে সংরক্ষণ করুন। মাংস যেন বরফ হয়ে লেগে না যায় তাই এই ব্যবস্থা।
মসলা বেটে নেওয়ার ঝামেলা পোহান আগে
ঈদের দিন মসলা রান্নার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজকাল বাজারে যতই রেডিমেট মসলা থাকুক না কেন, ঈদে কিছু মসলা নিজেদের তৈরি করতেই হয়। তাই মসলাগুলো প্রস্তুত করুন আগের দিন রাতে। রাতে ব্লেন্ডার কিংবা পাটায় বেটে একটি বাটিতে সংরক্ষণ করুন। রেখে দিন ফ্রিজে। রান্নার ঠিক আধঘণ্টা আগে ফ্রিজ থেকে বের করে আনুন।
আগের দিন করবেন যে রান্না
ঈদের আগের দিন কিছু রান্না করে রাখলে ক্ষতি নেই। স্টেকের মাংস, কিমা, পরোটার জন্য ভুনা আগেই বানিয়ে রাখতে পারেন। আবার ঈদের দিন রুটির আয়োজন করলে রাতে বানিয়ে তা অল্প সেঁক দিয়ে রেখে দিতে পারেন। খাবার পরিবেশনের আগে বের করে নিলেই হবে। কিছু কিছু রেসিপি আগের দিনই করে রাখা যায়। পরেরদিন গরম করে নিয়ে খাওয়া যায়। এসব আপনার পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করছে।
ডেজার্ট আইটেমে বাড়তি মনোযোগ
ঈদের দিন সকালে সব ডেজার্ট রান্না করার পরিকল্পনা বাদ দিন। বরং আগের দিন উপকরণ প্রস্তুত করে রাখুন। তাহলে সকালে তাড়াহুড়ো কম লাগবে। ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই প্যাকেটজাত দুধ, কোল্ড ড্রিংকস, জ্যুস, আইসক্রিম ইত্যাদি এনে ফ্রিজে রেখে দিন। সকালে উঠে শুধু উপকরণগুলো দিয়ে আপনার ডেজার্ট রান্না শুরু করুন।
নিজের ত্বকের কথা ভুললে হবে কেন
ঈদের দিনের মেকআপের জন্য প্রয়োজনীয় সব কসমেটিকস কেনা হয়ে গেলে ড্রেসিং টেবিলে তা মেকআপ ব্রাশ, স্পঞ্জসহ গুছিয়ে রাখুন। যাতে সাজার সময় হাতের কাছেই সহজে সব পেতে পারেন। কী লুকে সাজবেন তাও সিলেক্ট করে নিন। হেয়ার স্টাইল ঠিক করে নিন। হেয়ার ব্যান্ড, চিরুনি ধুয়ে রাখুন। আগের দিনই বিভিন্ন ফেসপ্যাক বা ত্বকের যত্ন নেওয়ার কাজ সেরে নিন। পুরো রমজানে গরমে ত্বকের ওপর নানা অত্যাচার গেছে। একদিনই সময় পাবেন ত্বককে প্রাণবন্ত করার জন্য।
অবশেষে মেহেদির পালা
ঈদ এলে মেহেদি না দিলে কারোই উৎসব মনে হয় না। মেয়েরা বসে যায় হাতে মেহেদি লাগানোর কাজে। এত ব্যস্ততার মধ্যে মেহেদি লাগানোর জন্য বাজার থেকে মেহেদি টিউব অথবা কোণ এনে রাখুন। মেহেদি ডিজাইন পছন্দ করে রাখুন। কাঁচা মেহেদি পাতা ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার আগেই আনিয়ে নিয়ে বেটে নিন কিংবা কোণ তৈরি করে নিবেন। মেহেদি যদি পার্লারে দিতে চান তাহলে আগেই গিয়ে লাগিয়ে নিন।
Leave a Reply