1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন

পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০

ঝিনাইদহ সদরের বৈডাঙ্গা পশুর হাট। করোনার কারণে দুই মাসের বন্ধ থাকার পর সাপ্তাহিক এ হাটটিতে আবার বেচাকেনা শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রির আশায় এই হাটে পশু এনেছেন পাশের গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম। কোরবানির উপলক্ষে বিক্রির জন্য একটি মাত্র গরু পালন করেছেন এই কৃষক। ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে এমন ধারণা তার। কিন্তু হাটে ক্রেতা নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাম করছেন মাত্র ৭০ হাজার টাকা। শুধু রবিউল নন, তার মতো অনেক কৃষক গরু বিক্রির জন্য পশু আনায় হাটে অনেক গরু। কিন্তু রাজধানীর বেপারিরা না আসায় বিক্রি হচ্ছে না।

তার পাশেই আরেক কৃষক আবুল কালাম। তার গরুর ৪৫ হাজার টাকা দাম করায় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গলা টিপে মেরে ফেলেন তা-ও এমন দাম বইলেন না। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ৬ মাস বাড়িতে লালনপালন করেছি। করোনার কারণে গরুর খাদ্যের অনেক বেড়েছে। এত লোকসান হলে চাষিরা মরবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝিনাদই সদর ও হরিণাকু- উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকার কৃষক ও খামারিদের গরু বিক্রি হয় এই বাজারে। এই এলাকার অনেকেই শ্রমিক হিসেবে বিদেশে কর্মরত রয়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্যসহ গ্রামের কৃষকরা দু-একটি করে গরু লালনপালন করেন। পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে তারা এসব গরু বিক্রি করেন। আগের দুটি উৎসবে বাজার বসতে দেয়নি প্রশাসন। তাই গরু বিক্রি করতে পারেননি কৃষকরা। তাই কোরবানি উপলক্ষে গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু করোনার কারণে এই গরু বিক্রি না আশঙ্কা সবার মাঝে। এদিকে

গরুর খাবার ভুসি, ধানের বিচালি, খুদসহ অন্যান্য জিনিসের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। এখন গরু লালনপালন করা আর সম্ভব হচ্ছে না। এসব দোকানে বাকি বেড়েছে। কিন্তু বিক্রির আশা দেখছেন না কেউ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এক মাস বাদেই উদযাপিত হবে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু ও পশুর হাট নিয়ে অনেক আগে থেকে খামারি, ব্যাপারী ও হাটের ইজারাদারদের ব্যস্ততা থাকলেও এবার চিত্রটা ভিন্ন। মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে কোরবানি পশুর বাজারেও। এ বছর দেশে ১ কোটি ৯ লাখেরও বেশি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। উপরন্তু করোনায় বিগত তিন মাসে মাংস বিক্রি কমে যাওয়ায় উদ্বৃত্ত রয়েছে বিপুলসংখ্যক পশু। অন্যদিকে করোনার পরিস্থিতিতে আয় কমে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে। স্বল্প আয়ের মানুষসহ অনেকেই এবার আর্থিক অসুবিধার কারণে কোরবানি দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে আকালের এমন দিনে মন্দা বাজারে পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারি ও প্রান্তিক পশু পালকরা। বিক্রি হলেও রয়েছে আশানুরূপ দাম না পাওয়ার শঙ্কা।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুর গ্রামের গরু খামারি মো. আউয়াল-উজ-জামান। দুই পুরুষ ধরে গরু পালন ও ব্যবসায় জড়িত তিনি। সারা বছর কম-বেশি হলেও কোরবানির মৌসুমে গরু বিক্রি করে পুষিয়ে নেন তা। এবছরও কোরবানিকে সামনে রেখে ২০৭টি গরু লালনপালন করছেন তিনি। কিন্তু করোনায় ইতোমধ্যেই মাথায় হাত গ্রামের এ খামারির। তার ওপর দেশের এমন পরিস্থিতিতে কোরবানিতেও ব্যবসা হবে কিনা তা নিয়েও চিন্তিত তিনি।

আউয়াল-উজ-জামান বলেন, প্রতিবছর রমজান মাস থেকেই পুরোদমে ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। এবার করোনায় এমনিতেই ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। কোরবানির হাটেও বেচা-বিক্রি কেমন হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। প্রতিবার কোরবানির তিন মাস আগে থেকেই সিজনাল (মৌসুমি) খামারিদের কাছে গরু বিক্রি শুরু হয়ে যায়। গেল বছরও কোরবানি উপলক্ষে সিজনাল ব্যবসায়ীদের কাছে ৭২টা গরু বিক্রি করেছি। করোনায় এবার সিজনাল ব্যবসায়ীরাও গরু কিনতাছে না। এবার সিজনাল খামারিরাও কম। এ মাসে মাত্র দুইটা গরু বিক্রি করছি।

আলমডাঙ্গার কুমারি গ্রামের আরেক গরুর খামারি মো. রসুল মিয়া বলেন, এবার মানুষের কাছে টাকা নেই। তাই হাটে গরু বেশি থাকলেও ক্রেতা কম হবে। গরু বেচতে না পারলে পথে বসতে হবে আমাদের।

রসুল আরও বলেন, সারা বছর ধইরা ৮৭টা গরু পালছি। পশু পালনের খরচও বেড়েছে। গরুর পেছনে আমার দেনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ আছে। গরুর খাবারের দাম গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ছে। এক মাস আগে ৩৬ কেজির ভুসির বস্তা কিনেছি ৯০০-১০০০ টাকায়। এখন তা ১ হাজার ৪০০ টাকা। ভুট্টার কেজি ছিল ১৮ টাকা। এখন তা ৩০ টাকা। অনেক টাকা খরচ করেছি, এখন গরু বেচতে না পারলে সারা বছরের কষ্ট ভেস্তে যাবে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো. ইমরান হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিবছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গরু বিক্রি হয়। অন্যান্য বছরে রমজান ও ইদুল ফিতর মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ গরু বেচা-কেনা হয়। সেখানে করোনার কারণে এ বছর বেচা-কেনা হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন লাখের মতো। এই অবিক্রীত গরু এবার কোরবানির পশুর সঙ্গে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে প্রায় ২০ লাখ গরু উদ্বৃত্ত রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার বিক্রি ২০ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ কম হতে পারে বলে ধারণা করছি আমরা। এতে অনেক খামারি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার দেশে কোরবানিযোগ্য মোট পশুর সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪২ লাখ ৩৮ হাজার, ছাগল ও ভেড়া ৬৭ লাখ এবং অন্যান্য হিসাবে দুম্বা ও উট ৪ হাজার ৫০০। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ। এ বছর পশুর সংখ্যা ৯ লাখ কম। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার পশু উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে কম হবে, তাই কোরবানির পশু নিয়ে কোনো সংকট দেখছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) একেএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর যে জোগান রয়েছে তা চাহিদার চেয়ে বেশি হবে বলেই আশা করছি। আমরা পশু বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। করোনার কারণে পশুর হাটের সংখ্যা বেশি করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে সামাজিক দূরত্ব মানা যায়।’

বাংলাদেশ মাংস বিক্রেতা সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, করোনায় আর্থিক মন্দার ভেতর মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। যে ব্যক্তি দুই লাখ টাকার গরু কিনত সে এবার এক লাখ টাকার গরু খুঁজবে। যে দুটি কিনত সে একটা কিনবে। অনেকে হয়তো কোরবানিই দেবেন না। এবার রমজান ও ঈদুল ফিতরেও গরু ও মাংস বিক্রি অনেক কম হয়েছ। আমাদের ধারণা, এবার কোরবানিতেও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ গরু কম বিক্রি হবে। আর চাহিদা কমে জোগান বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই দামও কমে আসে। সুতরাং খামারি ও কৃষকদের দুই দিক থেকেই লোকসান। দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় খামারিরা হয়তো হাটমুখী হবেন না। নিজ এলাকা থেকেই পশু বিক্রির চেষ্টা করবেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com