মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সৈন্যদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছে দেশটির সরকার। সেনাসদস্যদের প্রত্যহার করার সরানোর জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয়া দিয়েছে মালদ্বীপ। এই আবহে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল নয়াদিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মালদ্বীপে বিমান চলাচল করতে পারে এমন পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারস্পরিক সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে ভারত।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘মালদ্বীপের মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে ভারতীয় বিমানগুলোর চলাচল জারি রাখা জরুরি। এবং এই কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে উভয় পক্ষই একটি সমাধানসূত্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে।’ মালদ্বীপ এবং ভারতের সম্মতিক্রমে একটি নির্দিষ্ট দিন বেছে নিয়ে পরবর্তী আলোচনা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকটি বিমান মালদ্বীপের প্রান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ‘ওষুধ এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে’ দেয়ার কাজ করে।
মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনাসদস্যদের সরানোর বিষয়ে নয়াদিল্লির সাথে আলোচনা করতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে মোহম্মদ মুইজ্জুর সরকার। এই বিষয়ে ভারতও সম্মতি জানিয়েছিল বলে জানা যায়। মালদ্বীপ সরকারের একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, সম্প্রতি এই কমিটির দ্বাদশ বৈঠকে ১৫ মার্চের মধ্যে সেনাসদস্যদের সরানোর জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মুইজ্জুর সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল্লা নাজিম ইব্রাহিম ওই দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘ভারতীয় সেনারা মালদ্বীপে থাকতে পারবেন না। কারণ এটাই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তার সরকারের সিদ্ধান্ত।’
নভেম্বর মাসে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুইজ্জু বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের মাটি থেকে সমস্ত বিদেশী সেনাকে আমরা ফেরত পাঠাব।’
এ ক্ষেত্রে মুইজ্জু নাম না-করলেও স্পষ্টভাবেই ভারতকে নিশানা করেন। কারণ, ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনাসদস্যদের। তবে চলতি বিতর্কের আবহে মালদ্বীপের এই সময় বেঁধে দিয়ে সেনাসদস্যদের সরাতে বলার ‘আর্জি’কে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘চীনপন্থী’ বলে পরিচিত মুইজ্জু গত সপ্তাহেই পাঁচ দিনের জন্য চীন সফরে যান। সফরের তৃতীয় দিনে গত বুধবার জিনপিংয়ের সাথে রাজধানী বেইজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেখানেই ভারতের সাথে সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে মালদ্বীপের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন চীনা প্রেসিডেন্ট তথা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষনেতা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই বৈঠকেই বেইজিংকে তাদের ‘পুরনো বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ বলেন মুইজ্জু। চীন থেকে দেশে ফিরেই শনিবার মুইজ্জু হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছিলেন, কাউকে ধমকানোর ছাড়পত্র দেয়নি তার সরকার। অনেকেরই মত, তিনি নাম না করে ভারতকেই নিশানা করেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
Leave a Reply