ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন এবং কোনো কিছুই তাদের থামাতে পারবে না।
ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সামরিক ঘাটিতে সৈন্যদের উদ্দেশে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু বলেন, বিজয় অর্জন এবং হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত ইসরাইল যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুই আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা শেষ পর্যন্ত যাব, বিজয় পর্যন্ত। এর চেয়ে কম হবে না।’
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকুক কিংবা না থাকুক তারা গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন তারা।
ইসরাইলের সেনাবাহিনীর হামলায় গাজায় বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার কারণে ইসরাইল ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, গাজায় নির্বিচারে বোমা হামালার কারণে ইসরাইল আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে।
গাজায় চলমান ইসরাইলের হামলা নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সাথে দেশটির সম্পর্ক সর্বকালের সবচেয়ে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
অন্যদিকে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ে একটি টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের জন্য তিনি যে কোনো উদ্যোগে রাজি আছেন।
তবে হামাসকে বাদ দিয়ে কোনো আয়োজন করা যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে ইসরাইল হামাসকে নির্মূল করতে চায়।
এদিকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে সংঘর্ষের সময় তাদের ১০ সেনা নিহত হয়েছে।
গাজায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর জন্য এটি ছিল সবয়ে ভয়ঙ্কর দিন।
নিহত ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে একজন লেফট্যানেন্ট কর্নেল রয়েছেন।
হামাসের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নাগরিক পণবন্দী রয়েছেন তাদের পরিবারের সাথে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক করেছেন।
পণবন্দীদের পরিবারের সাথে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এটাই সরাসরি বৈঠক। হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও উপস্থিত ছিলেন।
পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী যেসব উগ্রপন্থী ইহুদি ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ করেছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপিয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন।
ইউরোপিয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, বসতি স্থাপনকারীদের উগ্রপন্থীদের সহিংসতায় পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জীবনে ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
এ সঙ্ঘাতের কারণে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি স্থাপনের সম্ভাবনা ফিকে হয়ে আসছে এবং এর মাধ্যমে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দেন ইউরোপিয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট।
জাতিসঙ্ঘ এবং অনেক দেশ মনে করে, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কিন্তু পশ্চিমতীরে তীরে বসবাসরত ইসরাইলিরা সেটির বিরোধিতা করে।
পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ করা নেতানিয়াহু সরকারের প্রধান অ্যাজেন্ডা। কিন্তু এ বিষয়টি ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। একই সাথে প্রবল বৃষ্টির কারণে তাবুতে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষ ভয়াবহ দুর্দশায় পড়েছে।
জাতিসঙ্ঘের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, ফিলিস্তিনি এলাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং জনবহুল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে গেছে।
ইসরাইলের সমালোচনায় বাইডেন
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, গাজায় ‘নির্বিচারে বোমা হামলা’ চালানোর কারণে ইসরাইল বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারাচ্ছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের তরফ থেকে ইসরাইলের নেতৃত্বের সমালোচনা করে এটাই সবচেয়ে কড়া বিবৃতি।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালে পুনরায় নির্বাচনের প্রচারণায় ডেমোক্রেট দলের ডোনারদের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এসব কথা বলেন।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলের ভেতরে হামলা চালানোর পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘ইসরাইল তার নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারে। এছাড়া তাদের পাশে ইউরোপিয় ইউনিয়ন আছে, পুরো বিশ্ব আছে। কিন্তু নির্বিচারে বোমা হামলার মাধ্যমে তারা সে সমর্থন হারাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলের সমালোচনা করলেও গাজায় সামরিক অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে সহায়তা দিচ্ছে তা থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি।
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলের সাথে মতপার্থক্যের বিষয়টি প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের সাথে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে যাওয়ার বিরোধিতা করছেন।
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ কূটনীতিকরা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসছেন।
Leave a Reply