গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে বন্দী স্বজনদের উদ্ধার করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট পরিবার সদস্যরা। তারা নেতানিয়াহুকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিহিত করেছেন। এমনকি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে একজনকে বলতে শোনা যায় যে আপনার ক্যারিয়ার রক্ষার জন্য আমার সন্তানকে বলি দিতে প্রস্তুত নই।
মঙ্গলবার সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজন বন্দী এবং এখনো গাজায় বন্দী থাকা লোকদের কয়েকজন পরিবার সদস্য নেতানিয়াহু এবং তার যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে বেশ উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে।
হারজলিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিরা পরে মিডিয়ায় বলেন যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। আর নেতানিয়াহু তাদের দাবি পূরণে সরাসরি কোনো আশ্বাস দেননি। তিনি মোটামুটিভাবে আগে থেকে লেখা উত্তর দিয়েছেন। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
তারা বলেন, একপর্যায়ে তাদের অনেকে নেতানিয়াহুকে পদত্যাগ করতে বলেন।
ফাঁস হওয়া একটি উদ্ধৃতিতে নেতানিয়াহুকে বৈঠকে বলতে শোনা যায়, ‘কাউকে ঠিক এখনই ফিরিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই। সত্যিই যদি কেউ বলতে পারে যে কোনো বিকল্প আছে, তবে কে তা প্রত্যাখ্যান করবে?’ তার এই বক্তব্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়। এমনকি অনেকে মাঝপথেই বৈঠক শেষ করে চলে যান।
কান পাবলিক ব্রডকাস্ট এমন তথ্যও দেয় যে নেতানিয়াহু সমবেতদের বলেছেন যে ‘হামাস এমন সব দাবি উত্থাপন করেছে, যা এমনকি আপনাদের পক্ষেও গ্রহণ করা সম্ভব নয়।’ তবে উপস্থিত লোকজন এতে শান্ত হয়নি। তারা নেতানিয়াহুকে মিথ্যা কথা বলার জন্য অভিযুক্ত করেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার আবার যুদ্ধ শুরুর আগে এক সপ্তাহের বিরতির মধ্যে ১০৫ জন বেসামরিক নাগরিক মুক্তি পায় হামাসের তরফ থেকে। এদের মধ্যে ইসরাইলি ছিল ৮১ জন, থাই ছিল ২৩ জন, ফিলিপিনো ছিল একজন। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় এখনো ১৩৮ জন বন্দী রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০ জন নারী।
চ্যানেল ১২ এক বন্দীর মায়ের বক্তব্য প্রচার করেছে। তাতে ওই মা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, ‘আপনার বা এখানকার উল্লেখযোগ্য কারো ক্যারিয়ারের জন্য আমার ছেলেকে বলি দিতে আমি প্রস্তুত নই। একেবারেই নয়। আমার ছেলে দেশের জন্য মরতে স্বেচ্ছাসেবক ছিল না। সে ছিল বেসামরিক নাগরিক। সে তার বাড়িতে নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। … আমাকে প্রতিশ্রুতি দিন যে আমার ছেলেকে এবং অন্য বন্দীদের জীবিত উদ্ধার করে আনবেন।’
এর জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী তা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
ইসরাইলি সৈন্য হাদার গোল্ডিনের (২০১৪ সাল থেকে তার লাশ হামাসের কাছে রয়েছে) বাবা সিমচা গোল্ডিন চিৎকার করে মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আর কত হাদার গোল্ডিন আর রন আরাদ সেখানে থাকবে?’
গত সপ্তাহে হামাসের বন্দীদশা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আভিভা সেইগাল বৈঠকে কথা বলেন। তার স্বামী, মার্কিন নাগরিক, এখনো বন্দী রয়েছে গাজায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর বিমান থেকে ফেলা বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। আর এ সময় আমাদের আটককারী হামাসের সদস্যরা স্রেফ ঘুমিয়ে ছিল। আপনাদের বিমান হামলার তোয়াক্কা তারা করে না।’
Leave a Reply