1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ৮টি মানদণ্ড গুরুত্বপূর্ণ

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩

যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রথম ও পূর্বশর্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। তবে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে। কিছু সর্বজনীন নীতি এবং নির্দেশিকার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য মানদণ্ড নির্ধারিত হয়েছে।

গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রটোকল, ঘোষণা, চুক্তি এবং নানা ধরণের আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির আলোকে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারিত হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় বলা হয়েছে, সরকারের কর্তৃত্বের ভিত্তি তৈরি হবে জনগণের ইচ্ছার মাধ্যমে। নির্ধারিত সময় পরপর এবং প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হবে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই জাতিসঙ্ঘের কমিটি মানবাধিকার, ভোটাধিকার এবং নির্বাচন সংক্রান্ত একটি ঘোষণা গ্রহণ করেছে। নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেখানে ২৫টি বিষয় গ্রহণ করা হয়েছে।

‘দ্য রাইট টু পার্টিসিপেট ইন পাবলিক অ্যাফেয়ার্স, ভোটিং রাইটস অ্যান্ড দ্য রাইট টু ইকুয়াল অ্যাকসেস টু পাবলিক সার্ভিস’-শিরোনামের ঘোষণায় নির্বাচন ও ভোটাধিকার সংক্রান্ত নানা বিষয় উল্লেখ করা আছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য কার্টার সেন্টার ও জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই-কমিশনারের অফিস একটি কনফারেন্সের আয়োজন করে। সেখানে মূল বিষয় ছিল মানবাধিকার এবং নির্বাচনের মানদণ্ড নিয়ে আলোচনা করা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য কার্টার সেন্টার’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহত করার জন্য কাজ করে।

২০১৭ সালে তাদের প্রকাশিত যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন জরুরী, কারণ এর মাধ্যমে সরকারগুলো বৈধ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাতে মানবাধিকার রক্ষা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনন্সিটিটিউট (এনডিআই) তাদের এক রিপোর্টে বলছে-এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার যৌথভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নির্বাচন সংক্রান্ত নানা ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে। এগুলো সম্মান করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বাধ্য। পৃথিবীর নানা দেশে নির্বাচনের নানা পদ্ধতি রয়েছে।

এনডিআই বলছে, কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া শতভাগ সঠিক নয়। সব জায়গায় উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও কিছু সর্বজনীন বিষয় আছে যার মাধ্যমে বোঝা যায় নির্বাচন কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে :

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন :
নির্বাচন ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই এর মতে, একটি হচ্ছে ভোটাররা যাতে ঠিকমতো অংশ নিতে পারে। অন্যটি হচ্ছে, যারা নির্বাচিত হতে চায় তাদের অধিকার যাতে ঠিকমতো রক্ষা করা হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রার্থীদের জড়ো হওয়া কিংবা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কার্টার সেন্টার বলছেন, প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে বলা হয়েছে, প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দল ভোটারদের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে।

নির্বিঘ্ন প্রচারণা :
প্রার্থীরা যাতে ভোটারদের কাছে প্রচারণার জন্য ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে সে সুযোগ তাদের দিতে হবে। এজন্য একটি নির্বাচনী পরিবেশ দরকার যেখানে রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা তাদের বার্তা জনগণের কাছে ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারে সেজন্য তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে।

জনগণের সমর্থন পাবার জন্য রাজনৈতক দল এবং প্রার্থীরা যাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার স্বাধীনতা থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সর্বসম্মত ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্রচারণার জন্য দেশজুড়ে প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারে সেটি নিশ্চিত করা জরুরী।

স্বাধীন পর্যবেক্ষক :
নির্বাচনের প্রতিটি দিক পর্যবেক্ষণের জন্য নাগরিক সংগঠনগুলো যাতে অংশ নিতে পারে সেজন্য অবশ্যই তাদের সুযোগ দিতে হবে। এটি এক অর্থে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়।

ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস প্রিন্সিপাল অনুযায়ী রাষ্ট্রের সুশাসন এবং জনগণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে অংশ নেয়া নাগরিকদের অধিকার রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস পিন্সিপালের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষকদের গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে।

ভোট দান এবং গণনার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা স্বাধীনভাবে নিরীক্ষা করা উচিত। ব্যালটের নিরাপত্তা এবং ভোট গণনার পদ্ধতির উপর মানুষের যাতে আস্থা থাকে সেজন্য স্বাধীন পর্যবেক্ষকের উপর জোর দেয়া হয়েছে।

নির্দলীয় পর্যবেক্ষকদের বিষয়টি আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক সনদে উল্লেখ করা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই বলছে, পর্যবেক্ষকরা যাতে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে যেতে পারেন এবং নির্বাচনের আগে ও পরে তাদের সংশ্লিষ্ট কাজ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

পর্যবেক্ষকরা যাতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমন্বয় করতে পারে এবং আর্থিক সহায়তা নিতে পারে তার অনুমতি দিতে হবে।
তবে পর্যবেক্ষকদের হতে হবে স্বাধীন ও নির্দলীয়।

গণমাধ্যমে সমান সুযোগ :
সরকার-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যাতে কথা বলতে পারে এবং তাদের সমানভাবে সুযোগ দেয়া জরুরী।

এছাড়া নির্বাচন সংক্রান্ত কাভারেজ সঠিকভাবে দেবার জন্য বেসরকারি গণমাধ্যম যাতে নৈতিকভাবে এবং নির্বাচনের বিধি-বিধান অনুসারে কাজ করে সেজন্য তাদের উৎসাহিত করতে হবে।

ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রার্থী এবং প্রতিটি দল যাতে প্রচারণার জন্য গণমাধ্যমে সমান সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

স্বাধীন সংস্থা :
জাতিসঙ্ঘ কমিটির গৃহীত ঘোষণায় বলা হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করার জন্য একটি স্বাধীন নির্বাচনী সংস্থা থাকতে হবে এবং নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

গোপন ব্যালটে ভোট দেবার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভোটাররা যাতে তাদের অধিকার ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখানে কোনো ধরণের বিধি-নিষেধ কিংবা বৈষম্য থাকা যাবে না।

অন্যান্য বিষয় :
ভোটাররা যাতে স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কোনো ধরনের ভয়ভীতি, অর্থের প্রলোভন কিংবা কোনো অযাচিত প্রভাব যাতে ভোটারদের ওপর না থাকে। এছাড়া ভোট দেবার পর ভোটাররা যাতে কোনো প্রতিহিংসার শিকার না হয়।

নির্বাচনে যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য যাতে ভোটারদের কাছে থাকে। যাতে ভোটাররা বুঝতে পারে তারা কাকে ভোট দিচ্ছে। ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী।

জাতিসঙ্ঘ কমিটির ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্রার্থীদের অ্যাজেন্টের সামনে ভোট গণনা করতে হবে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com