মিশেল ওবামা, কমলা হ্যারিস, গ্রেচেন হোয়াইটমায়ার, ট্যামি ডাকওয়ার্থ, এলিজাবেথ ওয়ারেন, ট্যামি বল্ডউইন, ক্রিশ্চেন সিনেমা, ভ্যাল ডেমিংস, মিশেলে লুজান গ্রিশাম, স্ট্যাসি আব্রামস, কেইসা ল্যান্স বটমস, সুসান রাইস। একগুচ্ছ নাম। যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী একগুচ্ছ নারীর নাম। এর মধ্য থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কাকে বেছে নেবেন ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী জো বাইডেন? যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই এই আলোচনা জোরালো হচ্ছে। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে মার্চে ডেমোক্রেট দলের প্রাইমারি বিতর্কের চূড়ান্ত দিনগুলোর কথা। সেখানে জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলে রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বেছে নেবেন একজন নারীকে। এখন তার দলের মনোনয়ন নিশ্চিত। তাই তিনি কাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বাছাই করবেন সেই আলোচনা জোরালো হয়েছে।
তার চারপাশে প্রায় এক ডজন নারীর নাম। তিনি যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন তাহলে এটা হবে তার দলের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে একজন নারীকে মনোনয়ন দেয়ার তৃতীয় ঘটনা। এর চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম নারী হিসেবে তার দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক ফার্স্টলেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। আগামী আগস্টের শুরুর দিকে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণার কথা জো বাইডেনের। তার আগে পর্যন্ত আলোচনায় থাকা নারীদের এক নজর দেখে নেয়া যাক।
কমলা হারিস: ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে সামনের সারিতে সম্ভাব্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন কমলা হারিস। তিনি মার্কিন সিনেটর। ক্যালিফোর্নিয়ার এটর্নি জেনারেল এবং সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে বৈচিত্রপূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ড। তার মা ভারতের। পিতা জ্যামাইকার। তিনি এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে সরে যান।
গ্রিচেন হোয়াইমায়ার: তিনি মিশিগানের গভর্নর। কয়েক মাস আগেও তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা ছিল না। এরপরই করোনা ভাইরাসের মহামারি আঘাত করে। তার রাজ্যে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ায় তিনি হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ। কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা করতে থাকেন। নিজের রাজ্যে তিনি সামাজিক দূরত্ব এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেন। তার রাজ্য করোনা ভাইরাসের হটস্পট হয়ে ওঠায় এমন সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এতে তার বিরুদ্ধে রক্ষণশীলরা ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ করতে থাকে। ফলে ডেমোক্রেটদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তার রাজ্যে সামান্য ভোটের ব্যবধানে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। এই রাজ্যকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। ফলে জো বাইডেন যাতে আগের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই চিন্তা করতে পারেন। ফলে তিনি বেছে নিতে পারেন হোয়াইটমায়ারকে।
ট্যামি ডাকওয়ার্থ: তিনি ইলিনয় থেকে নির্বাচিত একজন জুনিয়র সিনেটর। ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে তার নাম। তিনি ইরাকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার চালাচ্ছিলেন। তখন তা গুলি করে ভূপাতিত করে বিদ্রোহীরা। এতে ট্যামি ডাকওয়ার্থ তার দুটি পা-ই হারান। সে অবস্থায়ই তিনি সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে অবসরে যান। এরপর তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ডিপার্টমেন্ট অব ভেটেরান অ্যাফেয়ার্সে অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ছিলেন। তারপর ২০১৬ সালে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। থাইল্যান্ড বংশোদ্ভূত প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে তিনি প্রথম মার্কি কংগ্রেসে পা রাখেন। পাশাপাশি দু’পা হারানো প্রথম নারী হিসেবে কংগ্রেসে যোগ দেন। সিনেটে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে প্রথম নারী হিসেবে তিনি প্রথম সন্তান প্রসব করেন। ইলিনয় হলো ডেমোক্রেটদের নিরাপদ রাজ্য। এখানে তাকে বেছে নিতে পারেন জো বাইডেন।
এলিজাবেথ ওয়ারেন: এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের মনোনয়ন লাভের ফ্রন্টরানার ছিলেন শুরুর দিকে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিভিন্ন জনমত জরিপে তিনি ছিলেন সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষে। প্রথম দিকে প্রাইমারি নির্বাচন এবং জনতার সমর্থন তাকে স্বস্তিদায়ক একটি অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। এরপরই তার সমর্থন কমতে থাকে। সমর্থন যেতে থাকে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের পক্ষে। উঠে আসতে থাকেন পিটি বুটিগিগ। অনেক উদারপন্থি আশা করতে থাকেন যে, তিনি স্যান্ডার্সকে অনুমোদন দিন। এক পর্যায়ে মার্চের শুরুতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যান। এখন তার মতো একজন ঝানু রাজনীতিককে জো বাইডেনের রানিংমেট হিসেবে দেখতে চাইতে পারেন ডেমোক্রেটরা।
ট্যামি বল্ডউইন: চার বছর আগে নির্বাচনের সময় কখনোই উইসকনসিনে নির্বাচনী প্রচারণা চালান নি বলে কড়া সমালোচনা আছে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে। এর ফলে তিনি ডেমোক্রেটিকদের নিরাপদ ঘাঁটি বলে পরিচিত এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে পরাজিত হন বলে অভিযোগ আছে। ডেমোক্রেটরা এবার সেই ভুল না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আহ্বান জানিয়েছেন এই রাজ্য থেকে ট্যামি বল্ডউইনকে বেছে নিতে। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে এই রাজ্যের একজন সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ১৪ বছর এ রাজ্য থেকে প্রতিনিধি পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে তা হবে ঐতিহাসিক। কারণ তিনি প্রকাশ্যে একজন সমকামী। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি হবেন একটি বড় দল থেকে প্রথম সমকামী নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
কিশ্চেন সিনেমা: তিনি অ্যারিজোনার। এই রাজ্যটি নির্বাচনে জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জো বাইডেন রাজনৈতিক যে উদারতা দেখিয়েছেন, অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তার যে পার্থক্য, তাতে এই রাজ্যটি ডেমোক্রেটদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে একটি কৌশল হতে পারে এই রাজ্য থেকে একজনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন দেয়া। সেক্ষেত্রে ক্রিশ্চেন সিনেমা হতে পারেন উত্তম বাছাই। ২০১৮ সালে অ্যারিজোনায় প্রথম ডেমোক্রেট হিসেবে এই রাজ্যে ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম ডেমোক্রেট হিসেবে সিনেটর নির্বাচিত হন। তিনি তরুণ, বুদ্ধিদীপ্ত, রাজনৈতিক প্রজ্ঞাময়।
ভ্যাল ডেমিংস: তিনি কংগ্রেসে ডেমোক্রেট দলের ব্যাকবেঞ্চার হিসেবে পরিচিত। গত বছরও তিনি খুব কম পরিচিত ছিলেন। এরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় তাকে ম্যানেজার হিসেবে বেছে নেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ফলে সবার নজরে পড়ে যান তিনি। রাতারাতি তিনি সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ফ্লোরিডার অরল্যান্ডেতে সাবেক প্রলিশ প্রধান, কৃষ্ণাঙ্গ। জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকা- নিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রে উত্তাল তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তিনি হয়তো জো বাইডেনের রাডারে ধরা পড়ে যেতে পারেন।
মিশেলে লুজান গ্রিশাম: প্রাইমারি নির্বাচনের সময় হিস্প্যানিকরা জো বাইডেনের ভোটিং ব্লকের দুর্বল জায়গা হয়ে ওঠে। ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও নেভাদার মতো রাজ্যগুলোতে বার্নি স্যান্ডার্স টপকে যান জো বাইডেনকে। এই রাজ্যগুলো হয়ে উঠতে পারে নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যাটলগ্রাউন্ড। যদি এসব রাজ্যে সমর্থন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন জো বাইডেন তাহলে তিনি বেছে নিতে পারেন নিউ মেক্সিকোর প্রথম মেয়াদের গভর্নর মিশেলে লুজান গ্রিশামকে।
স্ট্যাসি আব্রামস: আলোচনায় রয়েছেন স্ট্যাসি আব্রামস। তিনি ১০ বছর ধরে প্রতিনিধি পরিষদে জর্জিয়া থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কেইশা ল্যান্স বটমস: তিনি আটলান্টার মেয়র। জর্জ ফ্লয়েড মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যখন উত্তাল চারদিক তখন তিনি সবকিছু ম্যানেজ করেছেন সমতা ভিত্তিতে।
সুসান রাইস: বিস্ময়করভাবে এই তালিকায় স্থান পেয়েছে সুসান রাইসের নাম। তিনি নির্বাচিত কোনো পদে দায়িত্ব পালন করেন নি। এমনকি কোনো সাধারণ প্রচারণার অভিজ্ঞতা নেই তার। তুলনামুলকভাবে তিনি মার্কিনিদের কাছে কম পরিচিত। তার পরিচয় তিনি একজন কূটনীতিক। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথমে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ট পড়ে। পরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে। তাকে বেছে নিলে পররাষ্ট্র নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
মিশেল ওবামা: সাবেক ফার্স্টলেডি। তার প্রতি মার্কিন জনগণের বিপুল সমর্থন ও ভালবাসা আছে। তিনি বিশ্বজুড়ে একটি স্বীকৃতি মানুষ। তাকে বাছাই করা হলে, জো বাইডেনের চেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন।
Leave a Reply