গাজা উপত্যকার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালের গণকবর থেকে শতাধিক লাশ তুলে নিয়ে গেছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের কর্মকর্তা ইসমাইল আল থাওবতা এ কথা জানিয়েছেন। হাসপাতালের ভেতরে লাশের স্তূপ জমে যাওয়ায় গণকবরে সেগুলোকে দাফন করা হয়েছিল।
ইসমাইল আল থাওবতা বলেন, ইসরাইলি বাহিনী শনিবার বুলডোজার দিয়ে কবরটি খুঁড়ে লাশগুলো নিয়ে গেছে। এতে গাজার জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসরাইলি দখলদার বাহিনী গতকাল হাসপাতালের আঙিনায় আমরা যে কবর দিয়েছিলাম, সেখান থেকে শতাধিক লাশ নিয়ে গেছে। এছাড়া সম্প্রতি মারা যাওয়া ব্যক্তিদেরও হাসপাতালের ভেতরে কবর দিতে দিচ্ছে না ইসরাইলি বাহিনী।
হাসপাতালের ভেতরে লাশের স্তূপ জমতে থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কবর খুঁড়ে সব লাশ গণকবরে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী লাশগুলো নিয়ে গেছে। এসব লাশে কী পরিণতি হয়েছে, তা জানা যায়নি।
আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনী পরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করছে। তারা সেখানে হামাসের কমান্ড সেন্টার অনুসন্ধান করার দাবি করছে। বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সরঞ্জামের অভাবে হাসপাতালটির কার্যক্রম ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।
যুদ্ধের পরও গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকবে : নেতানিয়াহু
গাজার যুদ্ধ শেষ হলেও উপত্যকাটিকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) হাতে তুলে দেয়ার কোনো ইচ্ছা ইসরাইলের নেই। যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের আগ্রহ বাতিল করে দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে এই মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি যুদ্ধের পরই গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে বলে জানান।
নেতানিয়াহু রোববার সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘বর্তমান অবয়বে ফিলিস্তিনি কর্তৃফক্ষ গাজার দায়িত্বশীল হতে সক্ষম নয়। আমরা যুদ্ধ করার পর, এত কিছু করার পর কিভাবে আমরা এটিকে তাদের হাতে তুলে দেব?’
তিনি উল্লেখ করেন, মাহমুদ আব্বাস এত দিন পরও ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার নিন্দা করেননি।
তিনি বলেন, ‘আবু মাজেন [আব্বাস] হলুকাস্টের পর ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ নিধনযজ্ঞকে নিন্দা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, অনেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী ঘটনাটি উদযাপন করেছে।
নেতানিয়াহু আরো বলেন, পিএ ‘সন্ত্রাসী’ ও তাদের পরিবারকে মাসিক ভাতা দেয়, তাদের সন্তানদের ইহুদিদের ঘৃণা করতে শেখায়।
তিনি স্মরণ করে দিয়ে বলেন, ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহারের পর এটি পিএর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। হামাস ২০০৭ সালে সহিংস অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদেরকে উৎখাত করেছে।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজা উপত্যকাকে পিএর হাতে তুলে দেয়ার সুপারিশ করে আসছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত করা এবং পণবন্দীদের ফেরত আনার ব্যাপারে কোনো সমঝোতা হয়নি।
তিনি বলেন, যুদ্ধের পর গাজায় ইসরাইলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে।
তিনি জানান, ‘ওই দিনটির পর আরেকটি পরিবেশ বিরাজ করবে : আইডিএফ [ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স] যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে। একমাত্র এই উপায়েই আমরা গাজার আসামরিকীকরণ নিশ্চিত করতে পারি।’
তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেন, হামাসকে উৎখাত করার আগে ইসরাইল কোনো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে না। কেবলমাত্র সকল পণবন্দীর মুক্তির বিনিময়ে সাময়িক যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
তিনি বলেন, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল না করা পর্যন্ত ইসরাইল বিশ্রাম নেবে না। গাজার ভেতরে বা বাইরে থাকা সকল হামাস সদস্য মৃত মানুষ।
সূত্র : আল জাজিরা, জেরুসালেম পোস্ট এবং অন্যান্য
Leave a Reply