গণতন্ত্র, ধর্ম, বর্ণ নিরপেক্ষ দেশ যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যে প্রায়ই ঘটে বর্ণবাদী হামলা, বিশেষ করে লন্ডনে বর্ণবাদী হামলার সংখ্যা বেশি। বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে প্রায়ই বর্ণবাদী হামলার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা।
গত ১২ই নভেম্বর পূর্ব লন্ডনে ট্রেনের মধ্যে বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়েছেন আলাউদ্দিন নামে এক যুবক। গত ৯ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র হোইটচ্যাপেলে বর্ণবাদী হামলার শিকার হন স্থানীয় সাংবাদিক আহসানুল আম্বিয়া শোভন। ইতিপূর্বে অনেকেই রাস্তায় ট্রেনে বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়েছেন।
সদ্য হামলার শিকার হওয়া আলাউদ্দিন হোসেন জানান, রোববার লোকাল ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন। পাশেই বসা ছিলেন কয়েকজন যুবক। তারা কেউই এশিয়ান বংশোদ্ভূত নন। প্রথমে তারা আলাউদ্দিন হোসেনের ওপর হকিস্টিক ছুড়ে মারে। তাতে আলাউদ্দিন কিছু বলেননি। পরে তার উপর চুইংগাম মারে।
সাংবাদিক আহসানুল আম্বিয়া শোভন গত ৯ই সেপ্টেম্বর হোইটচ্যাপেল ইস্ট লন্ডন বাসস্টপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এসে তার নাক-মুখে কিল- ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে মাটিতে ফেলে দেয়, পরে তাকে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখানে চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়, তিনি পুলিশ রিপোর্ট করলেও হামলাকারীকে এখনো পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি। এরপর থেকে শোভন নিজেকে নিরাপত্তাহীন ভাবেন।
স্থানীয় সাপ্তাহিক বাংলা সংলাপ পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, বেশ কিছুদিন আগে লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের ব্রোমলি বাই বো এলাকায় এক বাঙালি বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়েছেন। হামলাকারীরা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তার একটি পা ভেঙে দিয়েছে। গত ২০শে ডিসেম্বর বিকাল ২টার দিকে বোর ইম্পসন স্ট্রিটে তার ওপর হামলা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রায় ৮ মিনিট সময় ধরে তার ওপর কিল-ঘুষি এবং লাথি চালায় হামলাকারীরা। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩ শ্বেতাঙ্গকে খুঁজছে পুলিশ।
হামলার শিকার বাঙালি ব্যক্তি ঘটনার নির্ধারিত জায়গায় গাড়ি পার্ক করে তার গন্তব্যের দিকে হাঁটছিলেন। এ সময় তাকে ফলো করে আসা একটি ভ্যান তার গাড়ির পাশে পার্ক করে। এরপর ভ্যান থেকে ৩ জন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ নেমে আসে। তারা কোনো কারণ ছাড়াই তাকে উদ্দেশ্য করে নানা আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ শুরু করে। একদম কাছে এসে একজন প্রথমে তার নাকে ঘুষি মারে। একই সঙ্গে অন্যজন তার মাথায় আঘাত করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার ওপর একের পর এক আঘাত করতে থাকে হামলাকারীরা। এ সময় একটি যন্ত্র দিয়ে তার পায়ে আঘাত করা হয়। তাতে তার পা ভেঙে যায়।
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে দুজন শ্বেতাঙ্গকে আটক করেছে পুলিশ। যদিও বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত রয়েছেন। তবে ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনে এরকম প্রায়ই ঘটছে বর্ণবাদী হামলা, শুধু বর্ণবাদী হামলাই নয় এটিএম মেশিন থেকে পাউন্ড তোলার সময়ও অনেক সময় পেছন থেকে এসে আক্রমণ করে পাউন্ড নিয়ে যায়। পুলিশ কঠোর হস্তে বর্ণবাদী হামলা দমন করতে কাজ করে যাচ্ছে। এরকম হামলার কারণে বাংলাদেশি কমিউনিটির বাসিন্দারা ভীষণ উদ্বিগ্ন। এরকম বর্ণবাদী হামলা নিরসনে স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর মেয়রদের ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের সজাগ দৃষ্টি কামনা করছেন বাংলাদেশি কমিউনিটি সহ এশিয়ান অন্যান্য কমিউনিটির বাসিন্দারা।
Leave a Reply