ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছে স্পেন ও বেলজিয়াম। দেশ দুটি গাজায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা বন্ধ এবং গাজার হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে বোমাবর্ষণের ঘটনার তদন্ত করার দাবি করেছে।
স্পেনের সামাজিক অধিকার বিষয়ক মন্ত্রী আইওন বেলারা বলেছেন, ইসরাইলকে অবশ্যই গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে ইউক্রেন ও গাজায় বিশ্ব নেতারা দ্বৈত নীতি অবলম্বন করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
আল জাজিরাকে দেয়া বুধবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ চালানোর জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছেন। স্পেনের সামাজিক অধিকার বিষয়ক এই মন্ত্রী দেশটির কট্টর-বামপন্থি পোডেমোস পার্টিরও নেতা। তিনি ইউক্রেন ও গাজায় হওয়া অপরাধের বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের দ্বৈত নীতির নিন্দা করেছেন। আইওন বেলারা বলেছেন, ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করা হলেও গাজায় ইসরাইলি বোমাবর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের বিষয়ে বিশ্ব নেতারা ‘বধিরের মতো নীরব’।
বেলারা বলেন, ‘ইসরাইলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এই পরিকল্পিত গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। আমরা অন্যান্য সংঘাতে মানবাধিকার নিয়ে জ্ঞান দিতে পারলেও এখানে সেটি পারছি না। বরং বিশ্ব বসে বসে এই ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখছে? হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, সন্তানদের হত্যার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে গাজার মায়েরা মরিয়া হয়ে চিৎকার করছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘গাজার এই ঘটনাবলীর বিষয়ে অনেক দেশ এবং অনেক রাজনৈতিক নেতার বধির নীরবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যারা (সঙ্কট সমাধানে) কিছু করতে পারেন। আমি যা জানি সেটি নিয়েই কথা বলছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে হচ্ছে ভন্ডামির প্রদর্শন করছে। ইউরোপীয় কমিশন যা দেখাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজায় হামলার প্রতিবাদে স্পেন ও অন্যান্য দেশগুলোর ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত। ইসরাইলের ক্ষেত্রে ইইউকে আগের মতো‘দ্রুত পদক্ষেপ’
নেয়ার পরামর্শ বেলারা বলছেন, ‘তারা (ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে) প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। আমরা (গাজার ক্ষেত্রে) সুযোগ হারাচ্ছি। এই মুহূর্তে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ আমরা অনেক কিছু করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার রাজনৈতিক বৃত্তকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন আইওন বেলারা।
তিনি আরো বলেন, সংঘাত শুরুর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে আনা উচিত এবং বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার অনুমোদন দেয়ার জন্য বিচার করা উচিত। এগুলো ‘মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন’।
আইওন বেলারা বলেন, ‘আমি আমার দেশ ও অন্যান্য দেশকে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছি। আমি মনে করি, এই পদক্ষেপ সঠিক রাজনৈতিক বার্তা পাঠাবে। আর তা হচ্ছে এই নেতার মতো যুদ্ধাপরাধীর সাথে আমরা কিছু করতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং (ইসরাইল) অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের শক্তিশালী বন্ধু থাকা সত্ত্ব্ও আমাদের আরো দৃঢ় হতে হবে।’
তেমনি রয়টার্স জানায়, গাজায় আগ্রাসন চালানোর কারণে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন বেলজিয়ামের উপ-প্রধানমন্ত্রীপেট্রা ডি সাটার। একইসাথে গাজার হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে বোমাবর্ষণের ঘটনার তদন্ত করতে বুধবার বেলজিয়াম সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ।
নিউজব্লাড সংবাদপত্রকে বেলজিয়ামের এই উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় এসেছে। নির্বিচারে বোমা হামলা চালানো অমানবিক। এটা স্পষ্ট, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক যে দাবি রয়েছে সেটির প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয় না ইসরাইল।’
ডি সাটার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত অবিলম্বে ইসরাইলের সাথে তার সকল সহায়তা চুক্তি ও কার্যক্রম স্থগিত করা।
তিনি আরো বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে পণ্যের আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা উচিত এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী সহিংস বসতি স্থাপনকারী, রাজনীতিবিদ, সৈন্যদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত। একই সময়ে তিনি বলেন, বেলজিয়ামের উচিত হামাসকে অর্থের প্রবাহ কমানোর পাশাপাশি বোমা হামলার তদন্তের জন্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
সূত্র : আলজাজিরা
Leave a Reply