গত বছরের শেষের দিকে প্রথমে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও এখন সমগ্র বিশ্বে মহামারির আকার ধারণ করছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। করোনা রুখতে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই দেয়া হয় লকডাউন।
কিন্তু এখন ধীরে ধীরে লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। সীমিত আকারে খুলে দেয়া হচ্ছে সব কিছু। কিন্তু করোনাভাইরাস কি চলে গেছে?
এমনটা মনে করলে সেটা হবে বড় ধরণের ভুল। কারণ ঠিক ১০০ বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লুর দ্বিতীয় ধাক্কা ছিল বেশি ভয়াবহ।
করোনা ভাইরাসের প্রথম ধাপ শেষ হলেও আবারো দ্বিতীয় ধাপে আরো বেশি শক্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আঘাত হানতে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেখা গেছে নিউজিল্যান্ডে ২৪ দিন পরেও রোগী পাওয়া গেছে। চীনের বেইজিংয়ে ৫০ দিন পরেও শনাক্ত হয়েছে নতুন রোগী। বেইজিংয়ে আবারো ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপক আকারে।
এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা বলছেন দ্বিতীয় ধাক্কা বলতে যা যা বুঝায় তা ইরানে ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে।
এসব থেকেই বুঝা যায় করোনাভাইরাস আবারো নতুন রূপে ফিরে আসছে।
দেশে নতুন করে আরো ৩,৫৩১ জনের শরীরে মহামারি করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩৯ জন।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৭৭৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের নমুনাসহ মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৮৫টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৯টি।
দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার ৩০৬ জন। শনাক্তের হার ২৩. ০৯ শতাংশ। সেই সাথে মারা গেছেন মোট এক হাজার ৪৬৪ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.৩০ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৫ এবং নারী চারজন। এদিকে, করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৮৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৭৭ জন।
বিশ্ব পরিস্থিতি
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৯ জনে।
এছাড়া, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ২৮৫ জন।
জেএইচইউর তথ্য অনুসারে, রবিবার পর্যন্ত ব্রাজিল ও রাশিয়া যথাক্রমে ১০ লাখ ৩২ হাজার ৯১৩ এবং ৫ লাখ ৭৬ হাজার ১৬২ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
রাশিয়ার পর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৮ জনের।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ২২ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৪ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলে। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় ৪৯ হাজার ৯৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে, শুক্রবার চীনের মূল ভূখণ্ডে নতুন করে আরো ২৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৩ জন স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে দেশটিতে নতুন করে কোনো প্রাণহানীর খবর পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ২১৩টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সঙ্কটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
Leave a Reply