আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে ৭ অক্টোবর গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলের ভেতরে ঢুকে ভয়াবহ হামলা চালায়। একটি আরব সূত্র একে ‘সকল ভুল হিসাবের ইতিহাসের বৃহত্তম ভুল হিসাব’ হিসেবে অভিহিত করে।
হামাসের সদস্যরা দৃশ্যত অভেদ্য হিসেবে প্রচারিত ইসরাইলের সীমান্ত বেড়া গুঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ১৪ শ’ ইসরাইলিকে হত্যা করে, ২৪০ জনের মতো লোককে বন্দী করে নিয়ে আসে। এরপর থেকে গাজায় অব্যাহতভাবে বোমা হামলা করে যাচ্ছে। ইসরাইলি হামলায় ইতোমধ্যেই গাজায় ১০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। এদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস তো বলেই ফেলেছেন, গাজা পরিণত হয়েছে ‘শিশুদের কবরস্থানে।’
হামাস এতই গোপনে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিল যে দোহায় তাদের রাজনৈতিক ব্যুরোকে পর্যন্ত তা জানায়নি। পুরো কাজটি সামাল দিয়েছিলেন হামাসের সশস্ত্র গ্রুপ ইজাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ।
তবে হামলার পর হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো দায়দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারা বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে কাতারের মধ্যস্ততায় আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।
তবে ইসরাইল হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার সংকল্পে এখনো অটুট আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। এমনটা ঘটবে, তা জানাই ছিল। তাহলে হামাস এ সময় এমন হামলা করল কেন?
হামাসের এই হামলার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অতি উগ্র ইহুদিরা আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে পশু বলি দিতে চেয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা ডোম অব দি রক (কুব্বাতুল সাকরা) গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের থার্ড টেম্পল নির্মাণের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা বলির জন্য বিশেষ লাল গরু যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিও করেছিল।
ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থানের এ ধরনের অবমাননা ঠেকানোর সংকল্প ব্যক্ত করে হামাস।
তাছাড়া ইসরাইলের কারাগারগুলোতে থাকা প্রায় ছয় হাজার বন্দীকে মুক্ত করার দায়দায়িত্বও হামাসকে কঠিন অবস্থায় রেখেছিল।
হামাসকে নির্মূল করা কি সম্ভব?
ইসরাইলি নেতারা কিন্তু এবারই প্রথম হামাসকে নির্মূল করার কথা বলছেন না। আগের প্রতিটি যুদ্ধের সময়ও বলেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তারা সরে গেছেন।
হামাসের নেতারা জানতেন যে এবারের হামলা হবে আরো ভয়াবহ। তবে তারা এখনো বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত ইসরাইল নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হবে।
হামাসের একটি সূত্র জানায়, ‘ইসরাইল হয়তো গাজার অর্ধেক ধ্বংস করতে পারবে। কিন্তু আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত ফলাফল হবে একই। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য সমস্যা হলো, যুদ্ধকে ভালো ভাবমূর্তি গড়ে শেষ করা।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখানেই তার সবচেয়ে বড় সমস্যা। তিনি যদি গাজায় হামাস নেতৃত্বকে নির্মূল করতে সক্ষমও হন, তবুও ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য তার দায়দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বেন।’
আর হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য হাসিল করা ইসরাইলের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, হামাসের আকার এবং গাজার সাথে সংগঠনটি এমনভাবে মিশে গেছে যে তাদের নির্মূল করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
সূত্রটি জানায়, ‘সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হামাস। তাদের যোদ্ধা আছে, যোদ্ধাদের পরিবার আছে। তাদের দাতব্য সংস্থার লোক আছে, তাদের পরিবার আছে। তাদের সরকারি কর্মী আছে, তাদের পরিবার আছে। সবাইকে একসাথে করলে দেখা যাবে, সংখ্যাটি গাজার মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ।’
আর গাজা সিটি ঘিরে ফেললেই হামাস যুদ্ধ শেষ করে দেবে, বিষয়টি তেমনও নয়। একইভাবে লেবাননের হিজবুল্লাহ যদি এই যুদ্ধে যোগ না দেয়, তবে হামাসের বিপদ বাড়বে, তেমনও নয়। তবে ইসরাইল যদি হামাসকে নির্মূল করতে পারে, তবে হিজবুল্লাহর জেনে রাখা উচিত যে এরপর আসবে তাদের পালা।
হামাস জানে, গাজার জনগণকে বিপুল মূল্য দিতে হচ্ছে এবং দিতে হবে। কিন্তু তবুও তারা এই মাটি ছাড়বে না।
সূত্রটি জানায়, ইসরাইলের সামরিক শক্তি অনেক বেশি। কিন্তু যুদ্ধে সবসময়ে শক্তির ভারসাম্য দিয়ে ফলাফল নির্ধারিত হয় না।
সূত্রটি জানায়, ‘ভিয়েতনামের দিকে দেখুন, আফগানিস্তানের দিকে দেখুন, আলজেরিয়ার দিকে দেখুন। দেখুন এসব উপনিবেশিক যুদ্ধ কিভাবে শেষ হয়েছিল।’
Leave a Reply