বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, রাজস্ব আদায়, জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্য সমন্বয়সহ বেশ কিছু শর্ত শিথিল করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল-আইএমএফ।
চার শ’ ৭০ কোটি ডলার ঋণ প্যাকেজের আওতায় চলতি বছরের শুরুতে আইএমএফ সেপ্টেম্বর নাগাদ ২৫.৩৪ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী বছরের জুন নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৬.৮১ বিলিয়ন ডলার নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ গঠনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল। এর বিপরীতে সংস্থার রিজার্ভ হিসাব করার পদ্ধতির ষষ্ঠ সংস্করণ বিপিএম৬ অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার। নিট হিসাব করলে এই পরিমাণ আরো কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা রিজার্ভের শর্ত শিথিল করার জন্য অনুরোধ করে। অনুরোধের প্রেক্ষাপটে আইএমএফ শর্ত শিথিল করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে রিজার্ভ ১৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী বছর জুন শেষে তা ২০ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা বলেছে।
গত বুধবার ও গত মঙ্গলবার প্রায় সারাদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের এসব বিষয় নিয়ে দরকষাকষি হয়। কিছু কিছু শর্তে নমনীয়তা দেখিয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়। বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থসচিব ড. মো: খায়েরুজ্জামান মজুমদার নেতৃত্ব দেন। আইএমএফ মিশনের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির এশীয়-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আইএমএফ মিশন চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারকে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল, সেটিও কমাতে রাজি হয়েছে। লক্ষ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এখন তা কমিয়ে নতুন লক্ষ্য দেয়া হয়েছে তিন লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, এ সংশোধিত লক্ষ্য অর্জনও কঠিন হবে। কারণ আমদানি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়ার সুযোগ কম। আবার কর ছাড়ও কমানো যাবে না। ফলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব সংগ্রহে বড় ধরনের উলম্ফন সম্ভব হবে না।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর আইএমএফ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় করেছে। তাই চলতি অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও ৬১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের প্রতিশ্রুতি পূরণে পিছিয়ে আছে এনবিআর।
এছাড়া সরকারের প্রাইমারি ব্যালান্সে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ইতঃপূর্বে এক লাখ ৬২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রেখেছিল আইএমএফ, যা এখন এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। ফলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আইএমএফের বোর্ডে।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধিদলের পর্যালোচনা বৈঠক ও সফর শেষ হচ্ছে। ঢাকা ত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে সংস্থাটি। এর আগে আজ দুপুরে ঢাকার এক পাঁচতারকা হোটেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সাথে আইএমএফ প্রতিনিধিদলটি বিদায়ী বৈঠকটি করবেন।
Leave a Reply