গাজার একটি হাসপাতালে নৃশংস হামলার প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বৈঠক বাতিল করেছেন জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ। পরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও ওই বৈঠক বাতিল করেন। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জর্ডান সফর বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছেন। আজ বুধবার মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল-ফাত্তাহ আল সিসি, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসেরও এই বৈঠকে অংশগ্রহণের কথা ছিল। বাইডেন আজ প্রবলতম সমর্থন প্রকাশের জন্য ইসরাইল যাচ্ছেন।
গাজার হাসপাতালে বিমান হামলায় অন্তত ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলছেন, এই ঘটনা কিভাবে হলো তা তাদের জানা নেই, তারা খোঁজ নিচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে যেটা জানা যাচ্ছে যে গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ব্যাপটিস্ট হসপিটালে এই বিমান হামলা হয়েছে।
বাইডেন এই নৃশংস হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কাউকে দায়ী করেননি।
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে।
ইসরাইল অবশ্য দায় স্বীকার করেনি। তারা এজন্য গাজাভিত্তিক ইসলামিক জিহাদকে দায়ী করেছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, হামলা নিয়ে বাইডেন জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন।
এর আগে জানা যায় যে গাজা ভূখণ্ডের একটি বিদ্যালয়ের ওপরেও বিমান হামলা হয়। জাতিসংঘ বলেছে ওই হামলায় অন্তত ছয়জন মারা গেছেন যারা ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই বিমান হামলায় আরো অনেকে আহত হয়েছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ।
এক বিবৃতি জারি করে সংস্থাটি বলেছে, ‘ভয়াবহ.. আর এটা প্রমাণ করছে যে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণের কোনও দামই নেই!’
ওই স্কুলটিতে প্রায় চার হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলেন, যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
ঘটনাস্থলে বিবিসির সংবাদদাতা
বিবিসির সংবাদদাতা টম বেটম্যান আল আহলি আরব হাসপাতালে পৌঁছিয়েছেন।
তিনি জানাচ্ছেন, চার দিকে রক্তাক্ত, নিস্তব্ধ মানুষগুলো পড়ে আছেন। বিদ্যুৎ নেই, তাই অন্ধকারের মধ্যেই তাদের স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।
হাসপাতালের বাইরে লাশ পড়ে আছে, বিধ্বস্ত গাড়ি দেখতে পাচ্ছেন বিবিসি সংবাদদাতা।
কিছু ভিডিও বিবিসির কাছে এসেছে, যেগুলো যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটা বিরাট বিস্ফোরণ হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন হাসপাতালের একটা বড় হলে আশ্রয় নিয়েছিলেন কয়েক শ’ মানুষ।
অসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা জানাচ্ছেন ইসরাইলি বিমান হামলার কারণেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েক শ’ মানুষ ধ্বংস্তূপে আটকিয়ে পড়েছেন।
এক ডাক্তারের কথায়…
মধ্য গাজায় হামলার শিকার ওই হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজআওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, হামলাস্থলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যেখানে প্রায় চার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের ৮০ শতাংশ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিস্ফোরণে শত শত মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে।
বিবিসি হাসপাতালের আরেকজন কর্মী, ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি সার্জন অধ্যাপক ঘাসান আবু সিত্তাহর সঙ্গেও কথা বলেছে, যিনি হামলার সময় কাজ করছিলেন।
‘হাসপাতালের কিছু অংশে আগুন লেগেছে, ছাদের কিছু অংশ পড়ে গেছে। সব খানে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে আছে,’ বিবিসিকে বলেছেন, সিত্তাহ।
হামাস বলছে, এটা যুদ্ধাপরাধ
গাজায় হামাস কর্তৃপক্ষের মিডিয়া দপ্তর বলছে গাজার হাসপাতালে হামলা যুদ্ধাপরাধের সামিল।
তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘ওই হাসপাতালে কয়েকশো অসুস্থ ও আহত মানুষ ছিলেন, যারা, সম্ভবত, আগের বিমান হামলাগুলো কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।’
বহু মানুষ এখনও ধ্বংস্তূপের নিচে আটকিয়ে আছেন, জানিয়েছে হামাস।
গাজার আল আহলি হাসপাতালে বিমান হামলায় নিহতদের উদ্দেশ্যে তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
Leave a Reply