1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

ভারতের সাথে বিরোধে কানাডার মিত্ররা কেন ট্রুডোর পাশে দাঁড়াচ্ছে না?

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এ সপ্তাহে নিউইয়র্কে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তখন তার মুখের হাসি মলিন ক্রমে হতে শুরু করে।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের প্রায় সবই ছিল ভারতের বিরুদ্ধে তোলা ট্রুডোর অভিযোগের বিষয়ে।

গত সপ্তাহে ট্রুডো অভিযোগ করেন, কানাডার মাটিতে দেশটির একজন নাগরিকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে কানাডা। নিহত ব্যক্তি একজন শিখ অধিকার রক্ষাকর্মী যাকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করেছে ভারত।

ভারত সরকার কানাডার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সতর্কভাবে ট্রুডো বলেন, “আমরা কাউকে উস্কানি দিতে চাই না বা কোনো সমস্যা তৈরি করতে চাই না। আমরা আইনের শাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।”

কয়েকজন সাংবাদিক তখন প্রশ্ন করেন যে কানাডার মিত্ররা কোথায়? এ সময় ট্রুডোকে উদ্দেশ্য করে একজন সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘প্রয়োজনের সময়ে’ আপনাকে একা মনে হচ্ছে।

সাদা চোখে অন্তত এখন পর্যন্ত এটাই মনে হচ্ছে যে, ভারতের সাথে মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার সময় ট্রুডোকে পুরোপুরি একাই দাঁড়াতে হয়েছে।

ভারত বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ, জনসংখ্যার দিক থেকে যা কানাডার তুলনায় ৩৫ গুণ বড়।

যেদিন ট্রুডো কানাডার হাউজ অব কমন্সে ওই বিস্ফোরক ঘোষণা দেন, সেদিন থেকে দেশটির প্রধান মিত্রদের কাউকেই শক্ত গলায় সহায়তার আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

কানাডা প্রধান মিত্র দেশসমূহ, যাদের সাথে দেশটি নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে, তাদের একসাথে ফাইভ আইস ইন্টেলিজেন্স অ্যালায়েন্স বলা হয়- কানাডা ছাড়া এর অন্য সদস্যরা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।

কানাডার এই দেশগুলো অনেকটা দায়সারা গোছের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে, কেউই ট্রুডোর পাশে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়ানি।

কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে মিত্ররা?
অস্ট্রেলিয়ার বলেছে, তারা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে “গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”।

অস্ট্রেলিয়ার মতোই অনেকটা একই ধরণের শব্দ বেছে নিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি বলেন, তার দেশ “কানাডা যা বলছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে।”

সবচেয়ে নীরব প্রতিক্রিয়া এসেছে কানাডার প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই দু’টি দেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্র কানাডার পক্ষে ক্ষোভ দেখিয়ে কথা বলেনি।

চলতি সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘে ভাষণ দেয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ভারতের প্রসঙ্গ টানেন, তখন তিনি ভারতের প্রতি নিন্দা জানাননি।

বরং নতুন অর্থনৈতিক পথ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য দেশটির প্রশংসা করেন।

বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোনো ‘প্রতিবন্ধকতা’ নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কানাডার সাথে নিবিড়ভাবে আলাপ করা হচ্ছে।

কিন্তু জনসমক্ষে প্রকাশিত অন্যান্য বিবৃতিতেও তেমন উত্তাপ ছিল না। দুই দেশের মধ্যকার চলমান বিরোধকে ‘গভীর উদ্বেগের’ বিষয় বলার সাথে সাথে ছিল পশ্চিমা দেশগুলোয় ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ট্রুডোর জন্য সমস্যা হচ্ছে ভারতের ব্যাপক কৌশলগত গুরুত্বের তুলনায় কানাডার স্বার্থ কিছুটা মলিন হয়ে গেছে।

উইলসন সেন্টারের কানাডা ইন্সটিটিউটের গবেষক জেভিয়ার ডেলগ্যাডো বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্য পশ্চিমা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্ররা চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা ও পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে যে কৌশল ঠিক করেছে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতনির্ভর। সেটা এই মুহূর্তে চাইলেই তারা একেবারে বাদ দিতে পারবে না।”

“মিত্ররা যে কানাডার প্রতিরক্ষায় দ্রুত এগিয়ে আসেনি, সেটা আসলে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় সকলের অবস্থানের ইঙ্গিত।”

কানাডার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিটিভি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন নিশ্চিত করে বলেছেন যে ফাইভ আইসভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করেছে।

এই মিত্র দেশগুলোই জনসমক্ষে হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে কানাডার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে যে প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “গোপন কূটনৈতিক আলোচনার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না।”

তবে এ ঘটনা বিশ্বমঞ্চে কানাডার দুর্বল অবস্থানেরও ইঙ্গিতও দেয়। পশ্চিমাদের নির্ভরযোগ্য এক মিত্র, কিন্তু যে নিজ গুণে পরাশক্তি নয়।

কানাডা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টোফার স্যান্ড মনে করেন, এখানে একটি একটি শক্তির খেলা দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “এখানে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কাজ করছে শক্তি, ক্ষমতা ও আর্থিক বিষয়, যার ঠিক কোনোটাই কানাডার নেই।”

ভারতের বাইরে খুব কম লোকই জনসমক্ষে অভিযোগ প্রকাশ করার ট্রুডোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

তার এই অভিযোগ সত্য হলে এটি হবে কানাডার মাটিতে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড যা ঘটিয়েছে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশ। তবে এসব নৈতিক বিষয় বৈশ্বিক মনোযোগ ঘোরাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

ট্রুডোর জন্য এই শীতল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার মানে হচ্ছে, বেশ কিছু সময় ধরে একা হয়ে পড়া এবং এই সময়ের মধ্যে ভারতের সাথে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকা।

যার মধ্যে রয়েছে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক বহিষ্কার, ভ্রমণে সতর্কতা জারি, আর সবচেয়ে নাটকীয় হচ্ছে ভারত ভ্রমণে ইচ্ছুক কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত।

কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো যোগ হয়েছে, কানাডার এই লিবারেল নেতার এই দীর্ঘ সপ্তাহটি শেষ হচ্ছে এক দীর্ঘতর গ্রীষ্মের সাথে সাথে।

কানাডার নাগরিকরা একদিকে যখন মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সুদহার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন দেশটির নির্বাচনে চীনের হস্তক্ষেপ করার অভিযোগের খবর সামনে এসেছে।

সমালোচকরা বলছেন, ট্রুডো ও তার মন্ত্রীসভা বিষয়টি জানলেও এটি গুরুত্ব সহকারে নিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।

এরপর দেশটির কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার পল বার্নার্ডোকে একটি মধ্যম মাত্রার নিরাপত্তা বেষ্টিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে।

এ নিয়েও ট্রুডো ও তার সরকার আরেকবার চাপের মুখে পড়ে।

সেপ্টেম্বর নাগাদ, ট্রুডোর প্রতি জনসমর্থন গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে এসেছে।

দুই হাজার পনের সালে নির্বাচিত ট্রুডোকে সমর্থন করেন না ৬৩ ভাগ কানাডিয়ান।

নির্দলীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাঙ্গাস রিড ইন্সটিটিউটের প্রেসিডেন্ট শাচি কার্ল বলেন, গত আট বছরের মধ্যে তার জনসমর্থন এতটা কমেনি। তাকে নানা ধরণের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। যেমন ‘আপনি কি আরো ক্ষমতায় থাতে চান?’ ‘আপনি কি পদত্যাগ করবেন?’

এটা ট্রুডোর জন্য আরেকটি শীতল বাস্তবতা।

তিনি একজন তারকার মতো ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গ্লোব অ্যান্ড মেইল নিউজ পেপারের প্রধান রাজনৈতিক লেখক ক্যাম্পবেল ক্লার্ক বলেন “তিনি একজন সেলিব্রেটি যা আমরা কানাডার রাজনীতিতে কখনো দেখিনি। আর নির্বাচনে জয়লাভের পর তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে।”

কিন্তু আট বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকার পর মনে হচ্ছে কানাডিয়ানদের সাধ মিটেছে।

ক্লার্ক বলেন যে মনে হচ্ছে, ট্রুডোর তারকা শক্তি মলিন হয়ে এসেছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক কয়েক মাস ধরে।

এখনো অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের সাথে এই উত্তেজনায় মনে হতে পারে যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ট্রুডো একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, কিন্তু দেশের মধ্যেও এই ধাক্কাটা দরকার ছিল।

ক্লার্ক বলেন, “এই উত্তেজনা তাকে সব ধরনের অভ্যন্তরীণ প্রশ্ন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।”

ট্রুডো তার সপ্তাহ শেষ করেছেন আরেক মিত্র এবং সেলিব্রেটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।

কমপক্ষে এক দিনের জন্য হলেও ট্রুডো খুব ভাল সঙ্গ পেয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com