পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ৭ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাণিজ্য মন্ত্রাণলয়। এই চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের সবমহল থেকে রফতানি বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হলেও রফতানি প্রবৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ ও রফতানি বাজার সম্প্রসারণ কাক্সিক্ষত মাত্রায় হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ নানা কারণে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দিতে সাতটি চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা চিহ্নিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে- স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রফতানি বাজার সম্প্রসারণ; রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ; বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা; আমদানিকৃত পণ্যমূল্য বৃদ্ধি; নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা; দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বিশ্বায়নের ফলে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানো। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সব কথা বলা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড প্রিফারেন্সিয়াল সিস্টেম এমাং দ্য মেম্বার স্টেটস অব দ্য ওআইসি (টিপিএস-ওআইসি) এবং ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ডি-৮ প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (ডি-৮ পিটিএ) কার্যকর করেছে এবং আরটিএ পলিসি ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ চুক্তি কার্যকরকারী দেশগুলোতে শুল্ক ছাড় কিংবা হ্রাসকৃত শুল্কে পণ্য রফতানি করতে পারবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রফতানি নীতি ২০২৩-২০২৬ প্রণয়ন করা হবে এবং আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪ বাস্তবায়ন ও শিল্পায়নের মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ট্রেড পার্টনারদের বাজারে পণ্য ও সেবার অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার অর্জন করা হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকৃত দেশগুলোর জন্য বিদ্যমান শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজার সুবিধা এবং ট্রেড রিলেটেড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস (ট্রিপস)-এর আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ফার্মাসিউটিক্যালের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত অব্যাহতি সুবিধা উত্তরণ-পরবর্তী ৬ বছর অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা হবে।
জানা গেছে, রফতানি নীতি ২০২১-২০২৪ অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রফতানি আয় ৮ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার কথা রয়েছে। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছরে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি সই করার লক্ষ্যে ২টি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা; বিভিন্ন দেশ ও জোটের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ; রফতানি নীতি ২০২৩-২০২৬ প্রণয়ন করা; তৈরী পোশাক কারখানায় কমপ্ল্যায়েন্স অর্জনে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ; দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ২৫০টি বাজার মনিটরিং এবং ডিজিটাল বাণিজ্য আইন ২০২৩-এর খসড়া প্রণয়ন করা।
Leave a Reply