আফ্রিকার দেশ সেনেগাল থেকে দুই শ’র বেশি অভিবাসী নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একটি নৌকার সন্ধান করতে শুরু করেছে স্প্যানিশ উদ্ধারকর্মীরা। এক সপ্তাহের বেশি আগে ওই নৌকাটি ক্যানারি আইল্যান্ডের কাছাকাছি এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।
সেসময় এরকম আরো দু’টি নৌকা নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, যাতে শতাধিক যাত্রী ছিল।
দাতব্য সংস্থা ওয়াকিং বর্ডার জানাচ্ছে, সেনেগালের উপকূলীয় শহর কাফোন্তিন থেকে একটি মাছ ধরার নৌকায় করে অভিবাসীরা রওনা হয়েছিলেন। সেই নৌকায় অনেক শিশুও রয়েছে।
নৌকাগুলো ২৭ জুন ক্যানারি দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে আর সেগুলোর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
স্পেনের সমুদ্রে উদ্ধারকারী সংস্থা বার্তা সংস্থা ইফেকে জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযানে একটি বিমানও অংশ নিয়েছে।
তবে নিখোঁজ হওয়া অন্য দু’টি নৌকা সম্পর্কে খুব কমই তথ্য জানা গেছে।
ওয়াকিং বর্ডারের কর্মকর্তা হেলেনা মালেনোকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানাচ্ছে, অন্য নৌকাগুলোর একটিতে ৬৫ জন যাত্রী ছিল, আরেকটিতে ৬০ জন ছিল বলে জানা যাচ্ছে।
তিনটি নৌকা মিলিয়ে তিন শ’র বেশি অভিবাসী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভূমধ্যসাগরের গ্রিক উপকূলের কাছে জুন মাসের মাঝামাঝি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবার এই নিখোঁজের ঘটনা ঘটল। ওই ঘটনায় কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত হয়েছিল।
জাতিসঙ্ঘ বলেছে, ওই নৌকায় কমপক্ষে পাঁচ শ’ যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
আফ্রিকার যেসব পথ দিয়ে অভিবাসীরা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক নৌপথের অন্যতম এই ক্যানারি দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা।
শুধুমাত্র হালকা মাছ ধরার নৌকায় করে যাত্রা করার কারণেই নয়, বরং শক্তিশালী আটলান্টিক স্রোতও সেখানে বিপদ ঘটাতে পারে।
জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সাগর পাড়ি দিয়ে স্প্যানিশ দ্বীপে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫৯ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এর আগে ২০২১ সালে এই মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১১২৬ জন।
স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আইওএম জানিয়েছে, ২০২২ সালে অবৈধভাবে ১৫ হাজার ৬৮২ জন অভিবাসী স্পেনে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম।
তবে আইওএম বলছে, ‘তুলনামূলকভাবে কমছে বলে মনে হলেও, ২০২০ সালের আগে যতো অভিবাসী এই বিপজ্জনক পথে সাগর পাড়ি দিয়ে আসতেন, তার চেয়ে এখনো অভিবাসীদের আসার হার অনেক বেশি।’
জুনের মাঝামাঝি গ্রিসে ভয়াবহ ওই নৌকাডুবির পর দেশটির অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ইয়োরগোস মিশাইলিদিস বিবিসির ওয়াল্ড টুনাইট প্রোগ্রামে বলেছিলেন, “গ্রিস বরাবরই ইইউকে বলে আসছে একটি ‘কঠোর অভিবাসন নীতি’ প্রণয়ন করতে হবে। যাদের সত্যিকার অর্থে অভিবাসন প্রয়োজন তাদের গ্রহণ করতে হবে, শুধুমাত্র অর্থ আছে এমন লোকদের নয়, যারা পাচারকারীদের অর্থ দিয়ে অভিবাসী হতে চায়।”
‘এখন এমন অবস্থা যে পাচারকারীরাই সিদ্ধান্ত নেয় কারা ইউরোপে আসবে,’ বলেন মিশাইলিদিস।
‘যাদের সত্যি প্রয়োজন তাদের জন্য আশ্রয়, সহায়তা এবং নিরাপত্তা প্রদান করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাজ। এটা শুধু ইতালি, গ্রিস বা সাইপ্রাসের সমস্যা নয়। এটা নিয়ে ইইউকে ভাবতে হবে। একটা শক্ত অভিবাসন নীতি তাদের অবশ্যই প্রণয়ন করতে হবে।’
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে শরণার্থী এবং অভিবাসীদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ গ্রিস।
জাতিসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইউরোপের প্রথম সারির দেশগুলোতে প্রবেশ করেছে, যাদের বেশিরভাগই ইতালিতে প্রবেশ করেছে।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply